তিন ফিট বালু ও পাথরের পরিবর্তে ১ ফিট দেয়া হচ্ছে ॥ পানিতে মিশছে পোল্ট্রি ফার্মের ময়লা

দামুড়হুদার উজিরপুরে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ সমিতির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ সমিতির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নতুন নতুন সংযোগ দিয়ে কৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্লান্টে তিন ফিট বালু ও তিন ফিট পাথর থাকার কথা থাকলেও এক ফিট বালু দিয়েই পানি শোধন করা হচ্ছে। ফলে নিরাপদ পানির নামে ভুক্তভোগী কী খাচ্ছে তা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া প্লান্ট সংলগ্ন স্থানেই রয়েছে পোল্ট্রি মুরগির ফার্ম। ফার্মের বিষ্ঠা ও নোংরা পানিতে মিশছে বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ ব্যাপারে এলাকার বেশ কিছু সচেতন ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।
এলাকাসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামের ৯০ ভাগ টিউবওয়েলই আর্সেনিক কবলিত হওয়ায় ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ইউনিসেফের ডিপিএইচের অর্থায়নে আর্সেনিক নিরসন প্রকল্পের পানি শোধনাগার নির্মাণ করে। গঠন করা হয় উজিরপুর আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ সমিতি। ইউনিসেফ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর কমিটির মেয়াদ শেষে নতুন কমিটি গঠনের কথা। কিন্তু ২০১৬ ও ১৭ সালে দুই মেয়াদে একই কমিটি প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের মতো কমিটি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে, আগের সংযোগের সাথে আরও ১৪৫ নতুন সংযোগ দিয়ে ৩ হাজার ১শ টাকা করে সমিতি হাতিয়ে নিয়েছে। তার কোনো হিসাব-নিকাশ না দেয়ায় সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই।
গ্রামের মৃত দুখী ম-লের ছেলে ইউপি মেম্বার মোয়াজ্জেম, খুকাই জোয়ার্দ্দারের ছেলে সাবেক মেম্বার লিয়াকত আলী, মহির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল আজিজ, মৃত সামছদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন, মৃত আবুল হোসেনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ ও মৃত আহসান হকের ছেলে মিঠু অভিযোগ করে বলেন, আগে যারা কমিটিতে ছিলেন তারা প্রতি বছর মেয়াদ শেষে বার্ষিক হিসাব গ্রামবাসীকে জানিয়ে নতুন কমিটিকে বুঝিয়ে দিতেন। নিয়ম অনুযায়ী তারা তিনমাস পর পর প্লান্টে তিন ফিট বালু ও তিন ফিট পাথর দিয়ে নিরাপদ আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ করতেন। অথচ এই কমিটি গত ২ বছরে একবার বালি পরিবর্তন করলেও নিয়ম অনুযায়ী যে পরিমাণ বালু বা পাথর দেয়ার কথা তা তারা দেননি। তিন ফিটের স্থলে তারা দিয়েছেন মাত্র এক ফিট। ফলে সঠিকভাবে এতে আর্সেনিকমুক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান কমিটি এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করলেও ১৪৫টি নতুন সংযোগসহ পূর্বের ৮৪ লাইনের ট্যাপপ্রতি মাসিক ১শ’ ও ট্যাংক থেকে সরবরাহকৃত বাড়িপ্রতি ৩০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে গ্রামের মৃত ঠা- ম-লের ছেলে বর্তমান সভাপতি মন্টু রহমান বলেন, বর্তমান কমিটির বিভিন্ন অনিয়ম ও গ্রামবাসীর নানা অভিযোগের কারণে আমি কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। প্লান্টের কোনো ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুজাফ্ফর হোসেন ও সহসম্পাদক মতিয়ার বলেন, গ্রামবাসীর সব অভিযোগ সত্য নয়। নিয়ম মেনেই কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন সংযোগ দেয়া বাবদ যে টাকার কথা বলা হচ্ছে তা নতুন সংযোগের কাজেই ব্যয় করা হয়েছে এবং লাইনের ট্যাপ প্রতি ১শ টাকা ও ট্যাংক থেকে সরবরাহকৃত বাড়িপ্রতি ৩০ টাকা উত্তোলন করে বিদ্যুত বিল ও ড্রাইভারের বেতন দেয়া হয়। তাছাড়া পূর্বের কমিটিই বিভিন্ন অনিয়ম করেছে বলে তারা অভিযোগ করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শুকুর আলীর ছেলে নাসির হোসেনের পোল্ট্রি ফার্মের সাথে লাগোয়া আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানির প্লান্ট। সেই প্লান্টেই পোল্ট্রি ফার্মের অনেক ময়লা পানি বিশুদ্ধ করা ট্যাংকের মধ্যে পড়ে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।