কৌতূহল কোথায় নিচ্ছে তা বুঝতে না পারা অন্ধত্ব

‘সমাজে কিছু অপ্রয়োজনীয় উঠতি বয়সী রয়েছে, ওদেরকে আবর্জনার মতো পরিষ্কার করা দরকার’। মানসিকভাবে অসুস্থ হলেও কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরিতে পারদর্শী রুশ যুবক এ মন্তব্য করে এমন এক বিকৃত রুচির খেলা তৈরি করেছে যা দক্ষিণ এশিয়াতেই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এতে আতঙ্কের তেমন কিছুই নেই। একটু সতর্ক হলেই আধুনিক সেলফোন ও কম্পিউটার চালিত এ গেম থেকে উঠতি বয়সীদের রক্ষা করা সম্ভব। ব্লু-হোয়েল চ্যালেঞ্জার নামে ইন্টারনেটে ছড়ানো এ গেমের শুরুর শর্তেই বলা আছে, এ খেলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা করা হয়, আত্মহত্যার ঝুঁকি আছে। তারপরও কেন এ খেলা? কৌতূহলী হওয়া ভালো, কৌতূহল কোথায় নিচ্ছে তা বুঝতে না পারা অন্ধত্ব। অন্ধকারে ঝাঁপ বোকামি।
মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির চেয়ে নাকি নীলতিমির মেধাই বেশি। ভাগ্যিস ওদের হাত নেই। হাতের অভাবে কিছুই তৈরি করতে পারে না। মানুষ যা পেরেছে, মানুষ যা পারে বলে দাবি করা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে একদিন মানুষের উদ্ভাবিত শক্তির হাতে মানবসভ্যতাই হয়তো বিলীন হয়ে যাবে। যদিও ইতোমধ্যে পারমাণবিক বোমা তারই পূর্বাভাস। অন্যতম প্রমাণও। অথচ- মানুষের স্বার্থেই মানুষের উদ্ভাবনকে মানুষ স্বাগত জানিয়েছে, তার মানে এই নয়, উদ্ভাবনের কাছেই মানুষকে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হবে। এ বিষয়ে এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যত যে রসাতলে তা অনুমান করাও সহজ। উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকা মানুষগুলো বিষয়টি আলবত জানেন। ওরা নিশ্চয় নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারতে চান না। যদিও কিছু উদ্ভাবক থাকতেই পারে যাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। একজন মানুষ হয়ে মানুষের কল্যাণের বদলে মানুষের ক্ষতি ডেকে আনার বা বিপথগামী করার মধ্যে কর্তৃত্ব থাকলেও কৃতিত্ব থাকে না। কর্তৃত্ব ফলানোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে পেশীত্ব প্রয়োগ। যাকে পশুর সাথেই তুলনা করা সাজে। তাছাড়া ব্লু-হোয়েল আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে ওই খেলায় মেতে কেউ নিজের ক্ষতি নিজে করবে না। নিজেকে বসাবে না বোকার আসনে। আর কেউ যদি ওই খেলা নিজের সেলফোন বা কম্পিউটারে লোড করেই থাকো তাহলে এখনই আনস্টল করো। হচ্ছে না? গুগলের সহযোগিতা নাও, না হলে অভিজ্ঞ কারো। যতোটুকু জানি, যা অনুমতি নিয়ে ইনস্টল হয়, তা আনস্টলের সময়ও অ্যাডমিনিস্টেটর থেকে পারমিশন বা অনুমতি বাতিল করতে হয়। উঠতি বয়সীদের এ বিষয়ে সতর্ক করার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষকম-লীরও দায়িত্ব অবশ্য অনেক।
বিশ্বে এখন ‘আইডিয়া’ কেই সর্বাধিক মূল্যবান বলা হয়। যা জ্ঞান থেকেই আসে। জ্ঞান আসে কোথা থেকে? চর্চা থেকে। যে যতো জ্ঞানের চর্চা করে সে ততো জ্ঞানী। একজন জ্ঞানীরই অসুস্থ মানুসিকতার সৃষ্টি ব্লু-হোয়েল বা নীলতিমি নামের একধরনের প্রোগ্রাম ইন্টারনেটে ছড়িয়ে উঠতি বয়সীদের ঝরে পড়া থেকে রোধের বদলে তাদের মৃত্যু অনিবার্য করে তোলে। এটা সত্যিই বিকৃত মানসিকতারই কুফল। এ থেকে সমাজের উঠতি বয়সীদের রক্ষার্থে, আতঙ্ক ছড়ানোর বদলে সতর্ক করতে সচেতনতার আলো ছড়ানোই শ্রেয়। একই সাথে ওই ‘প্রোগ্রাম’ যাতে আমাদের দেশে ছড়াতে না পারে তা বিটিসিএলকে যথাসময়েই পদক্ষেপ নিতে হবে। উঠতি বয়সীরা যেহেতু অধিক কৌতূহলী, সেহেতু প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকটা ওদের মাঝে সহজলভ্য করা জরুরি।
পুনশ্চ: সময়ের কাজ সময়য়েই করতে হয়। ‘সময় গেলে সাধন হবে না………………’।