গাংনীর গোয়াল গ্রামে টাকা আদায়ের নামে জরিমানা ॥ একেই বলে মেম্বারের ক্ষমতা

গাংনী প্রতিনিধি: সালিসের নামে এক ব্যক্তিকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ‘হয় টাকা দাও, না হয় গ্রাম ছাড়ো’ এ হুমকিতে অটল রয়েছে সালিসপতিরা। অসহায় ওই ব্যক্তি স্থানীয় ইউপি মেম্বারের কাছে ইতোমধ্যে ৮৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন। জরিমানার বাকি অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় নিরাপত্তাহীনতায় সময় পার করছেন ভুক্তভোগী। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চরগোয়াল গ্রামে। ইউপি মেম্বার মিলন হোসেন ও গ্রামের কয়েকজন সালিসপতি মিলে এই অনাচার করলেও তাদের ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। প্রশ্ন উঠেছে গ্রাম্য সালিসে কিভাবে জরিমানা করা যায়?
সারাদেশে সালিস বিচারের নামে অবিচার-অনাচারের ঘটনা যখন আলোচিত ঠিক এমনই এক সময় চরগোয়াল গ্রামের সালিসপতিরা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জরিমানার টাকা আদায়ে মরিয়া হয়ে পড়েছে তারা। ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগে জানা গেছে, মটমুড়া ইউনিয়নের চরগোয়াল গ্রামের বাদল হোসেন বামন্দী বাজারে একজন চাল ব্যবসায়ী ছিলেন। কিছুদিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হন। ঢাকায় চিকিৎসায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে বাড়িতে ফেরেন। ওই সময় তার ছেলে দোকান চালাচ্ছিলেন। কিন্তু পিতার চিকিৎসায় পুঁজি খোয়া যায়। ওই পরিবারটির অসহায়ত্বে সহায়তার হাত বাড়ান বাদলের ছেলের বন্ধু হাড়াভাঙ্গা গ্রামের রাজু মিয়া। বাদলের চিকিৎসা, ঘর মেরামত ও ব্যবসা চালু করার জন্য প্রায় ৭০ হাজার টাকা ধার দেন। পরে কিছু টাকা পরিশোধ করে বাদল। বাকি অর্থ এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। ওই টাকা আদায়ে রাজুর তেমন কোনো দাবি না থাকলেও বিষয়টি নজরে পড়ে মটমুড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য মিলন হোসেনের। তিনি গ্রামে সালিস ডাকেন। রাজুর কাছ থেকে ধার নেয়া বাবদ বাদলকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি মিলন মেম্বারের বাড়ির সামনে সালিস হয়। সেখানে মিলন মেম্বার ছাড়াও তার ঘনিষ্ট গ্রাম্য মাতব্বর হিসেবে পরিচিত আবু হানিফ, আবু বক্কর, ইউসুফ, তাহাজসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গ্রামের অন্য কোনো মানুষ, বাদী কিংবা বিবাদী উপস্থিত ছিলেন না। মিলন মেম্বার একাই বিচার করে জরিমানা ঘোষণা করেন। ওই টাকা সালিসপতিরা পকেটস্থ করবেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে রাজুর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাদল হোসেন বলেন, আমি এখনো পঙ্গু প্রায়। সংসার চলে না। রাজুর টাকা আমি ফেরত দেবো। সময় পার হলেও রাজুর কোনো অভিযোগ নেই। তারা গায়ের জোরে আমাকে জরিমানা করেছে। আমি প্রথম দিন ৫০ হাজার ও বুধবার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছি। বাকি টাকা আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতো অন্যায় ও জুলুম হলেও ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না বাদল।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ধরনের সালিস করার এখতিয়ার মেম্বার ও গ্রাম মাতব্বরের নেই। জরিমানা ধার্য করার বিষয়টি চরম অন্যায় ও আইনের লঙ্ঘণ। মেম্বার কিভাবে সালিস করলেন এবং জরিমানা নিলেন তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জরিমানা করার বিষয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেন ওসি।
এদিকে জরিমানার বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার মিলন হোসেন বলেন, রাজু আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। তাই টাকা আদায়ের জন্য আমরা বিচার করেছি। এভাবে বিচার ও জরিমানা করার ক্ষমতা আপনার আছে কি-না প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষিপ্ত হন।
সালিসের নামে অনেক সময় অবিচার হচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয় মানুষের সচেতনতার কারণে কোনো কোনো স্থানে আইনানুগ ব্যবস্থাও হচ্ছে। সাজাও পাচ্ছেন অভিযুক্ত সালিসপতিরা। এর পরেও থামছে না এসব কুকর্ম। বাদলের মতো একজন দরিদ্র মানুষ কিভাবে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করবেন। অপরদিকে বাদল হোসেন বাড়ি ছেড়ে দিয়ে বসবাস করবেন কোথায়? বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন সহায়তার হাত বাড়াবে এমনই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী পরিবারের।