স্বভাবগত নিন্দুকও মুখ ঘুরিয়ে করছেন প্রশংসা

ফেলে আসা দিনগুলো ফেরানো যায় না যেমন, তেমনই অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঐতিহ্যবাহী ঘটনারও পুনরাবৃত্তি হয় না। নতুন দিনে নতুন করে যেটা হয় সেটা নতুন কিছু। গতানুগতিকতার ¯্রােত থেকে একটু বের হয়ে নতুন কিছু করার মধ্যে শুধু ইচ্ছেশক্তি থাকলেই হয় না, সৎ সাহসেরও দরকার হয়। জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ সেই সাহস, সেই বিচক্ষণতারই যে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা ভবিষ্যত স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। কেননা, অতীতকে মূল্যায়ন করে বর্তমান, আর বর্তমানকে মূল্যায়ন করবে ভবিষ্যত। বর্তমানের উজ্জ্বলতা ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করতে উৎসাহ জোগায়। যেমন অতীতের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল প্রতিযোগিতা আজকের আয়োজনের উৎসাহ।
খেলাধুলার আয়োজনের মূল দায়িত্বে যারা অধিষ্ঠিত তাদের অধিকাংশের মুখেই দীর্ঘদিন ধরে প্রায় অভিন্ন মন্তব্য শোনা যেতো। যেমন- ‘উদ্যোগ থাকলেও সংগঠক নেই। কিছু সংগঠক উদ্যোগ নিলেও পৃষ্ঠপোষকের বড় অভাব। আয়োজন থাকলেও দর্শক নেই। নেই উৎসাহ।’ এসব মন্তব্য বা যুক্তি কতোটা দুর্বল বা খোড়া তা এখন চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়ামোদীদের কাছে স্পষ্ট। খেলার মাঠ আবারও জাগিয়ে তোলা হবে। ঘর থেকে বের করে আনা হবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের। অতীতে যারা মাঠ কাঁপাতেন তাদের মধ্যে আবারও ছড়ানো হবে উত্তেজনা। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক হিসেবে জিয়াউদ্দীন আহমেদ দায়িত্বভার গ্রহণের কিছুদিনের মাথায় এ স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গার সর্বক্ষেত্রেই নিয়মজারির দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে বলে যে ঘোষণা দেন, তারই বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে গতপরশু চুয়াডাঙ্গা জেলা স্টেডিয়াম ঘিরে। দৃশ্য দেখে ক্রীড়ামোদিরাই শুধু নয়, স্বভাবগত নিন্দুকও মুখ ঘুরিয়ে হলেও বলেছেন- “এটাও কি সম্ভব?”। ফুটবল খেলা দেখার জন্য নবীন-প্রবীণ দর্শকদের পাশাপাশি নারীদেরও যে ভিড় হয় তারও ইতিহাস গড়লো চুয়াডাঙ্গা। খেলার মাঠের উত্তেজনার উষ্ণতা এখন বড় বড় কর্তাদের টেবিলে আলোচনার খোরাক নয়, চা দোকানের মাচা থেকে ক্রীড়ামোদী পরিবারের অন্দরমহলে। ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে উম্মাদনার ধরন দেখে যে কেউই বলতে বাধ্য হচ্ছেন, এলাকার মানুষ এরকমই বিনোদন যেন খুঁজছিলো বহুদিন ধরে।
চুয়াডাঙ্গা নূরনগর-জাফরপুরে নির্মিত জেলার সরকারিভাবে নির্মিত খেলার মাঠটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। মাঝে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়। কিছুদিন আগে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন হলেও স্থানীয়দের মধ্যে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। এরপর জেলা প্রশাসক ফুটবল টুর্নামেন্ট। এ আয়োজন শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলার ফুটবলমোদীদেরই মাতিয়ে তোলেনি, ১৬টি জেলাকেও জাগিয়ে তুলেছে। দর্শকের ভিড় বাড়তে বাড়তে প্রতিযোগিতায় যেদিন চুয়াডাঙ্গা জেলাদল থাকছে সেদিনই যেনো বাধ ভাঙছে ক্রীড়ামোদী দর্শক। দর্শকের¯্রােত দেখে শঙ্কা খুবই স্বাভাবিক, ধারণ ক্ষমতার বেশি উপস্থিতির কারণে উল্লাস মুহূর্তে ম্লান হবে না তো? নজর রাখতে হবে এদিকেও।