সমাজের ও পরিবারের ছোট-খাটো ন্যায়-অন্যায় এবং বর্তমান

জমির আইল ঠেলা নিয়ে প্রতিবেশী বা পাশের জমির মালিকের সাথে বিরোধ, বিরোধের জের ধরে ইট নিক্ষেপের পাল্টা পাটকেলের শিকার হওয়ার ঘটনা সমাজের যেন গাঁসওয়া ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শরিকি জমি নিয়ে বিরোধ? এ নিয়ে রক্তের বন্যা তো মাঝে মাঝেই দেখে সভ্য বলে দাবি করা এই সমাজ। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর চিত্রও যেন চিরচেনা। পত্রিকার পাতা খুললে এই তিন ধরনের খবর সামান্য রঙ বদল করে হলেও থাকাটাই যেন স্বাভাবিক। যদিও কারো কারো প্রশ্ন- এটাই কি আমাদের সমাজের চিত্র হওয়া উচিত? অনেক অনুচিতই তো সমাজের আনাচে-কানাচে আস্তানা গেড়ে দিব্যি ছড়াচ্ছে শেকড়-বাকড়।
জমির আইল ঠেলা অন্যায়। অতোটুকু অন্যায় করছে করুক এই বলে যদি কেউ ঘুরে ঘুমায়, তবে তাকে কি ঠিক উদার বলা যায়? অবশ্যই না। রবীন্দ্রনাথের ন্যায়দ- কবিতার বিখ্যাত সেই পঙ্কক্তি ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে তৃণসম দহে’ সমাজে নানাভাবেই পরীক্ষিত। অন্যায় সহ্য করলে অন্যায়কারীর ঔদ্ধত্য যে বাড়তেই থাকে তা বলার অবকাশ রাখে না। যার খেসারত সমাজকেই দিতে হয়। এ কারণেই সমাজে আইন, বিচার ও শাস্তির এতো আয়োজন। শরিকি জমি নিয়ে সমস্যা সমাধানেরও আইন রয়েছে, রয়েছে নিদের্শনা। তারপরও কেন পেশিশক্তি প্রয়োগ করে বেশি পাওয়া কিংবা একটু সুযোগ বুঝে সহোদর কিংবা নিকটাত্মীয়কেই কেন ফাঁকি দেয়া? অন্যকে ঠকানোর মানসিকতার উদ্ভাবনই বা হলো কীভাবে? পারিবারিকভাবে পাওয়া? এই পরিবারই যখন প্রত্যেকেরই সবচেয়ে বড় শিক্ষালয় তখন পরিবারের কোনো সদস্যেরই অন্যায় আচরণের দায় কি ওই পরিবারের বড়রা এড়াতে পারেন? যদিও একই পরিবারের সকলের মানসিকতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক নয়। তারপরও পারিবারিক নির্যাতনের আড়ালে পরিবারেরই পূর্বশিক্ষার কুপ্রভাবের বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। অবশ্য পারিবারিক ক্ষমতায়নের শাশুড়ি-পুত্রবধূর কটূকৌশল তো সেই হেঁসেল থেকেই শুরু হয়। এ থেকে পরিত্রাণ? অবশ্যই সুশিক্ষা।
পারিবারিক নির্যাতনেই হোক, আর প্রকৃতই অসুস্থতার কারণে হোক, অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচন করতে না পারলে সমাজের জন্য চরম ক্ষতিকর প্রবণতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। সমাজের স্বার্থেই অপমৃত্যু নামক রোগ থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে সঠিক দাওয়া দিতে সঠিক কারণ অনুসন্ধান অত্যাবশ্যকীয়। তাছাড়া কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মানে নিজে লাঠিসোঁটা নিয়ে অপরপক্ষের ওপর হামলে পড়া নয়। দেশের প্রচলিত আইনের ওপর আস্থা রেখেই পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারীদেরও আস্থা অর্জনে আন্তরিক হওয়া খুবই জরুরি, যদিও দুর্নীতিই মাঠপর্যায়ে কর্মরত কতর্ব্যপরায়ণ কর্তাদের উৎসাহে চরম অন্তরায়।