সচেতন সভ্য সমাজ কি কখনও অমানবিক হতে পারে

সব সমাজে সব কিছু করা যায় না। এরপরও সমাজের দু একজন অসামাজিক কিছু করলে পুরো সমাজটাকেই পঁচে গেছে বলে ছিঃ ছিক্কার করা সুচিবায়ুগ্রস্ত মনসিকতা। তবে সমাজের অধিকাংশ মানুষ যখন দু-একজন নারী-পুরুষকে ধরে আসামাজিক কাজের অভিযোগ তুলে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে তখন সেই সমাজের সুচিবায়ুই শুধু নয়, সচেতনতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সচেতন সভ্য সমাজ কি কখনও অমানবিক হতে পারে? অন্যায় করলেও কি কাউকে গাছে বেঁধে মারপিট কিংবা মুখে চুনকালি দেয়ার এখতিয়ার কোনো সভ্য সমাজের আছে? তাহলে চরমভাবে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আমাদের সমাজে হরহামেশাই ঘটছে কীভাবে? ঘাটতি কি শুধু সচেতনতায়, আইন প্রয়োগে নেই?
পরস্ত্রীর ঘরে পরপুরুষের প্রবেশ মেনে নেয়া সমাজ আমাদের নয়। ওটা প্রাচ্যের। সমাজকে সুন্দর রাখতে হলে সামাজিক শাসানি থাকা দরকার। সেই শাসানি মানে এই নয়, কোনো অপরাধীকে ধরে পিটুনি দিতে হবে। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার গোয়ালবাড়ি গ্রামের পরস্ত্রীর ঘরে পরপুরুষের প্রবেশের পর পরই কয়েকজন হাজির হয়। তারা দুজনকে আটক করে। ঘটা করে নারী ও পুরুষকে মারপিটের উল্লাসে মেতে ওঠে তারা। উৎসুক জনতাও ওই অমানবিক উল্লাসকে উসেকে দেয়। দৃশ্য দেখে মনে হয়, যেন ওরা সমাজের সর্বনাশ করে ফেলেছে। অথচ উভয়ের সম্মতিতে তেমন কিছু করলেও আইনের দৃষ্টিতে ওদের অপরাধের মাত্রা শাস্তির মাপকাঠিতে সিঁদেল চোরের চেয়েও কম। তবে ওদের ধরে যারা আইনে সোপর্দ না করে চরমভাবে নির্যাতন করেছে তারা ওদের চেয়ে যে ঢের বেশি অন্যায় করেছে তা উপলব্ধিতে আনা দরকার। উপলব্ধিবোধ জাগাতে যেমন দরকার সচেতনতা, তেমনই দরকার আইন প্রয়োগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহে নিয়োজিতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এটা নিশ্চিত হয় তখনই যখন সমাজের সচেতন মানুষগুলোর মধ্যে সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাগিদ থাকে।
কোনো অন্যায়ের বা অপরাধের শাস্তি কমবলে ওতে উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই। কেননা, অন্যায় অন্যায়ই। তাছাড়া বহুগামিতা কখনই কারোর জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। আনে না। প্রাচ্যের বহুদেশ বিলম্বে হলেও এটা উপলব্ধি করে দাম্পত্যে বিশ্বাস স্থাপনসহ পারিবারিক বন্ধনের দিকে পূর্বের তুলনায় এখন অনেক আন্তরিক। অথচ আমাদের সেদিক দিয়ে অনেক ভালো। ভালোই যখন, তখন আরও একটু ভালো হতে যে দায়িত্বশীলতা দরকার তাতে ঘাটতি রেখে লাভ কি? এই ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন সুশিক্ষা, সুস্থতা। এজন্য অবশ্যই সমাজেরই সচেতন মানুষগুলোকে অজুহাতে মুখ ঘুরিয়ে না রেখে সামাজিক দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়া দরকার। এটা সামাজিক দায়বদ্ধতাও বটে।