ঝিনাইদহের ডাকবাংলা ব্র্যাক অফিসের অদূরে রাস্তায় খানাখন্দ ॥ ট্রাক উল্টে সড়কের ওপর

শ্রমিকদের ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ : ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
ডাকবাংলা প্রতিনিধি: সারাদিনের টানা বৃষ্টিতে যাত্রাপথে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়ছেন ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়করর যাতায়াতকারী মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভুগছেন দূরপাল্লার বাস-ট্রাকের যাত্রীরা। বৈডাঙ্গা ১৪ মাইল (ইক্ষু সেন্টার) থেকে ব্র্যাক অফিস পর্যন্ত টানা ৩ বছর ধরে ভাঙাচোরা গর্ত, যেখানে নিয়মিত বাস-ট্রাক প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়। বাস-ট্রাক উল্টে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যার ফলে প্রায়ই প্রচুর যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৭টায় ঝিনাইদহ থেকে ছেড়ে আসা চুয়াডাঙ্গাগামী একটি ধান বহনকারী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট- ১৪ ২১ ৫৪) ব্র্যাক অফিসের সামনে উল্টে যায়। যার ফলে দুপাশে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। এমনকি দূরপাল্লার বাসগুলো বাজার গোপালপুর ঘুরে হলিধানী দিয়ে যাতায়াত করে। দীর্ঘক্ষণ যানজটের পর ডাকবাংলা ক্যাম্পের পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সড়ক সংস্কারের দাবিতে ২ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে ঝিনাইদহ মোটর শ্রমিকেরা। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়ক অবরোধ করে রাখে শ্রমিকেরা। সকালে ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি ট্রাক ডাকবাংলা এলাকায় ভাঙা রাস্তায় উল্টে যায়। এতে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় রাস্তার দুই পাশে শ শ যানবাহন আটকা পড়ে। প্রচ- বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। দ্রুত ভাঙা সড়ক মেরামত করা হবে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের এমন আশ্বাসে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাস্তা সংস্কার করা না হয়, তাহলে শ্রমিকরা জনগণ সাথে নিয়ে আন্দলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়ে বলে প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকাল এ সড়ক অবরোধ করা হবে।
এলাকাবাসী জানায়, নির্মাণ কাজ শেষ না করে ভাঙাচোরা অবস্থায় ফেলে রাখায় সড়কটির এখন বেহাল দশা। যা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিদিন কষ্ট করে চলাচল করছে শ শ গণপরিবহন। শুধু বর্ষার মরসুমে ৭২ ট্রাক উল্টেছে রাস্তার ওপর আর শ শ বাস-ট্রাকের পাতি এঙ্গেল ভেঙেছে। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে ৩টি ট্রাক উল্টে যায় রাস্তার ওপর। সেখানেও রাস্তায় যানযট শুরু হয় রাত ভোর পর্যন্ত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দূরপাল্লার পরিবহন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোনো মাথাব্যাথা নেই।
যাত্রীরা বলছে, সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তারা সাধারণ মানুয়ের সাথে তামাসা করছে। রাস্তার করুণ চিত্র দেখে কান্না আসে। ডেলিভারী রোগী কিংবা অন্যরোগী হাসপাতালে নেয়ার আগেই রাস্তা পার হতে গিয়ে মারা যায় এ খবর তারা জানেন না। মাস গেলেই সরকারি টাকা উত্তোলন করেন, কিন্তু দায়িত্ব পালন করেন না। এ লজ্জা কার সরকারের না কর্মকর্তাদের? প্রতিদিন দেখা যায় বাস-ট্রাক খানাখন্দে উল্টে আছে। পরিবহনের যন্ত্ররপাতি ভেঙে বড় অঙ্কের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সে দিকে কারও কোনো খেয়াল নেই। দূরপাল্লার গাড়িগুলো প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাস, ট্রাক-লরী কাঁচামাল বহণ করে থাকে এ রাস্তা দিয়ে। দেশের ৫০ ভাগ কাঁচামাল তরিতরকারি যায় এ পথে। রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পড়ে আছে। মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৈডাঙ্গা বাজারের পশ্চিম দিকে আদর্শপাড়া থেকে উত্তর নারায়ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৫শ মিটার পুরোনো সড়ক ভেঙে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড়বছর আগে শুরু করলেও আজও নির্মাণ কাজ শেষ করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন ওই স্থানে ২-৩টি যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে বা উল্টে যায়। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে দুর্ভোগ লাঘবের দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ বছর ধরে রাস্তাটি ভেঙেচুরে একাকার। রাস্তার ওপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার কাজ শেষ না করায় ঝিনাইদহ সওজ বিভাগ ঠিকাদারকে ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ফলে ঠিকাদার উচ্চ আদালতে মামলা করায় রাস্তার কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দ্বায়িত্বভার গ্রহণের পর বিষয়টি শুনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে পূর্বের ঠিকাদারের কাজ বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে। সাধুহাটি চেয়ারম্যান কাজী নাজীর উদ্দীন ও সাগান্না ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন কর্তৃপক্ষের কাছে রাস্তাটির মেরামতের জন্য জোরালো দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের আমেরচারা থেকে ডাকবাংলা ত্রিমহনী পর্যন্ত সড়ক এখন মারণ ফাঁদ। এই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। রাস্তার কাজ শেষ না করে ঠিকাদার লাপাত্তা। ভালো রাস্তা খুঁড়ে এভাবে ফেলে রাখায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ দুই বছর আগে শুরু হলেও গত দেড়বছর যাবৎ তা বন্ধ রয়েছে।