সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে শুরু হয়েছে অবিরাম বর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার: বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে এই অঝোর ধারা। যা আজ শনিবার ভোর পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। এদিকে টানা বর্ষণের কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বৃষ্টিতে নাকাল হতে হয়েছে বিশেষ প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজনকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গছে। সারাদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আজ শনিবারও সারাদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া এবং কাওড়াকন্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দুপারে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে কয়েক শ’ যানবাহন। এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই সারাদেশে ছোট আকারের নৌযান সমূহের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। মানুষের সাধারণ জীবনযাত্র ব্যাহত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার।
আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, উপকূলীয় উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার দুপুর গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল ও উড়িষ্যা এলাকায় অবস্থান করছিলো। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৗকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়াও নিম্নচাপের প্রভাবে আজ শনিবার দেশের বিভিন্ন বিভাগের ওপর ভারি বর্ষণের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, কুমিল্লার ওপর দক্ষিণপূর্ব অথবা পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। একই সাথে বজ্রবৃষ্টির অশঙ্কা রয়েছে। নিম্নচাপ দেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানের কারণে শুক্রবার সকাল থেকেই সারাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এর পড়েই বৃষ্টিপাতের প্রকোপ কমে আসতে পারে।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সারাদেশে ন্যায় দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউপি এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মুষলধারে পড়তে শুরু করেছে। এতে দিনভর কখনও থেমে আবার কখনও টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাট- বাজারে সকাল থেকে দোকানপাট খুললেও বৃষ্টির কারণে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের না হওয়ায় কর্মব্যস্ত অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। গ্রামের নিচু এলাকাগুলোর কিছু কিছু স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলো ভাঙা থাকায় ছোট-ছাট গর্তে পানি জমে গেছে অনেক স্থান কর্দমাক্ত অবস্থায় রয়েছে কোমরপুর, কার্পাসডাঙ্গা, বাঘাডাঙ্গা, মিশন পাড়া, আরামডাঙ্গা, কানাইডাঙ্গাসহ অন্যান্য পাড়া-মহল্লায় বৃষ্টির পানি আটকে থাকায় চরম দূর্ভোগ পহাতে হয়েছে এলকাবাসীর। এতে করে স্কুল, কলেজ গামীদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। এছাড়া রাস্তার মধ্যে ছোট থেকে বড় ধরনের গর্ত থাকায় ঘটছে দূর্ঘটনা। শহরের ড্রেনেজগুলেতে ময়লা আবর্জনা আটকে থাকার কারণে বৃষ্টির পানি কমতে সময় লাগছে অনেক।
এলাকাবাসীরা জানান, সামান্য গুড়িঁ গুড়িঁ বৃষ্টি হলেই রাস্তায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আটকে থাকা বৃষ্টির পানি সরতে সরতে দিন পার হয়ে যায়। এলাকার ড্রেনেজগুলোর ময়লা আবর্জনা অপসারণ না করার কারণে আটকে থাকা বৃষ্টির পানি সরতে সময় লাগছে। আমরা মনে করি ড্রেনেজগুলো পরিস্কার করলে এলকাবাসীর দূর্ভোগ কিছুটা কমে আসবে।
জীবননগর ব্যুরো: গতকাল শুক্রবার ভোর হতে অবিরাম বর্ষণে জীবননগরে নি¤œাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি থাকায় অবিরাম এ বৃষ্টির পানি নিঃস্কাশনে তেমন একটা কাজে দিচ্ছে না। ফলে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অবিরাম বর্ষণের কারণে সকালে দিন মজুর ও খেটে মানুষ ঘরের বাহির হতে পারেনি। রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল তেমন একটা চোখে পড়েনি। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো।