রোহিঙ্গা সঙ্কট : আনান কমিশনের সুপারিশেই আস্থা জাতিসংঘ কর্মকর্তার

নৃশংস অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচার করতে হবে :জাতিসংঘের দুই বিশেষ উপদেষ্টা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জেফ্রে ফেল্টম্যান মিয়ানমার সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার মিয়ানমারে পাঁচ দিনের সফর শেষ করেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা। সফরকালে তিনি রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর পুঁড়িয়ে দেওয়া বেশ কিছু গ্রাম স্বচক্ষে দেখেন। একইসাথে তিনি রাখাইনের রাজধানী সিত্তুয়ে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। ব্যাংকক থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের নির্বাসিত সাংবাদিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ইরাবতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেল্টম্যান মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারের কার্যত সরকার প্রধান অং সান সু চি’র উদ্যোগে সাবেক জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে রাখাইন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ফেল্টম্যান জানান, এই কমিশনের সুপারিশ বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো দিক-নির্দেশনা হতে পারে। কমিশনের সুপারিশের মধ্যে ছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, দারিদ্র্যতা দূর, সীমান্ত নিরাপত্তা ও আরাকান ও মুসলিমদের মধ্যে সংলাপ। গত সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদকে কফি আনান বলেন, আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

১৩ অক্টোবর ওই বৈঠকের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মিয়ানমারকে পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য চাপ দিচ্ছে। কফি আনান সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানালেও ফেল্টম্যান বলেছেন, বিষয়টি খুবই কঠিন হবে। এজন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারকে একসঙ্গে বসেই এটা সমাধান করতে হবে। আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানালেও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কোনো গঠনমূলক সিদ্ধান্ত ছাড়াই জাতিসংঘ কর্মকর্তার মিয়ানমার সফর শেষ হয়েছে। সফর শেষে এক বিবৃতিতে তিনি রাখাইনের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেকার অনাস্থা ও ভীতি দূর করতে জবাবদিহিতা, বৈষম্যহীন আইনের শাসন ও জননিরাপত্তার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মত দিয়েছেন। ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহেই বেশ কিছু পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের যারা বাড়ি হারিয়েছেন তাদের পুনর্বাসন প্রকল্প। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মংডু শহরের একটি মুসলিম প্রামে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) প্রদান শুরু হয়েছে। সহিংসতা বন্ধ ও অপরাধীদের বিচারে জাতিসংঘের দুই বিশেষ উপদেষ্টার আহবান

জাতিসংঘের গণহত্যা রোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা আদামা দিয়েং এবং মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি সুরক্ষায় দায়িত্বরত বিশেষ উপদেষ্টা ইভান সিমোনোভিচ বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারকে দ্রুত রাখাইন রাজ্যের চলমান সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সেখানে সংগঠিত নৃশংস অপরাধের বিষয়টি সামনে আনার আহবান জানিয়েছেন।

বেশ কয়েক বছর ধরে এই দুই উপদেষ্টা জাতিসংঘ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, রাখাইনে বর্বর ও নৃশংস অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকির যে বিষয়গুলি তারা চিহ্নিত করেছেন এগুলোর মূল অনেক গভীরে। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক চর্চা অব্যাহত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। একইসঙ্গে রাখাইনে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সহ-অবস্থান নিশ্চিত করতে যথাযথ শর্ত পূরণেও ব্যর্থতা রয়েছে সরকারের।

তারা বলেন, বিভিন্ন সময় অনেক কর্মকর্তার সতর্কতার পরও মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে নৃশংস অপরাধ থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তাদের দায়িত্ব পালনে সমানভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

দুই বিশেষ উপদেষ্টা গত ১৩ অক্টোবর আরিয়া ফর্মুলা বৈঠকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশের প্রস্তাবিত সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি মানবিক সহায়তাকর্মীদের প্রবেশাধিকার, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের আহবান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে প্রবেশ করতে দিতে আহবান জানিয়েছে।