উত্থাপিত কোনো প্রশ্ন দরিদ্রতায় পিষ্ট হোক তা প্রত্যাশিত নয়

না, একদিন বিশ্বের কোথাও একজনও অনাহারি থাকবে না। তবে ধনী-গরিবের তফাতটা হয়তো থেকেই যাবে। মানবসভ্যতা বিশ্লেষণে এসব অনুমান করা কঠিন নয়। এক সময় মানুষকে পশুর সাথে লড়তে হয়েছে, আবাদ শিখতেও সময় গেছে বহু। এর ধারাবাহিকতায় সভ্যতার আলো পৌঁছুনো কোথাও কি একজনেরও অনাহারে থাকা মানায়? মানায় না বলেই গাঁও গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে নারীরাও শহরমুখি হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ধুতোরহাটের কৃষ্ণা ওদেরই একজন। ঢাকায় লাশ হয়েছে সে। অস্বাভাবিক এ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ধামাচাপা পড়লে বিশ্বের সব দেশ থেকে অনাহারি দূর হলেও আমাদের দেশের কৃষ্ণা, করিমনদের অনাহারে দিন কাটানো অবর্ণনীয় কষ্টটা যে থেকেই যাবে।
ঘরে বাইরে যেখানে যখনই হোক অস্বাভাবিক কোনো মৃত্যুই খাটো করে দেখা উচিত নয়। আত্মঘাতী হলেও এর আড়ালের প্রকৃত কারণ উন্মোচনে সুষ্ঠু স্বচ্ছ তদন্তের বদলে গতানুগতিক ধারায় পেটের পিড়া কিংবা মস্তিস্ক বিকৃত রোগে ভুগছিলো বলে দায় এড়ানো মানেই সমাজের থকথকে ঘা ধুলো দিয়ে ঢেকে রাখা। ধুলোয় ঘা সারে না, বরঞ্চ উল্টো হয়। পঁচন ধরে গন্ধ ছড়ায়। আত্মহত্যা প্রবণতাসহ অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি সেই গন্ধেরই অন্যরূপে প্রকাশ নয়কি? ধুলো দিয়ে ঢেকে রাখার বদলে সমাজের সব অসুখেরই ডায়াগনোসিস করে তথা অসুখের প্রকৃত কারণ জেনে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলেই প্রজন্ম পাবে সুস্থ সমাজ। আমাদের সবই আছে, নেই শুধু আন্তরিকতা।
ধুতোরহাটের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে কৃষ্ণা অভাবের তাড়ানায় ঢাকায় কাজের সন্ধানে পথে পথে ঘুরেছে। কাজও জুটিয়েছে। দীর্ধদিন সে ভালোই ছিলো। এর মাঝে এমন কি ঘটলো যে তাকে লাশ হতে হলো? ঢাকা থেকে আত্মহত্যার কথা জানানো হলেও নিকজনদের মধ্যে সন্দেহ প্রবল। সে কেন আত্মহত্যা করতে যাবে? কি হয়েছিলো তার? হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে না তো? এ প্রশ্ন ওঠার আগেই তো পুলিশের তরফে প্রকৃত কারণ উন্মোচনে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কতো উচিত উৎকোচের জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। কৃষ্ণার মৃত্যুর পর উত্থাপিত প্রশ্ন দরিদ্রতায় পিষ্ট হোক তা প্রত্যাশিত নয়। ওর মৃত্যু রহস্য হেলায় আড়াল হলে ওদের মতো সংগ্রামীরা শক্তি পাবে কোথায়?