চুয়াডাঙ্গা রেলগেটের শব্দ দূষণ ও ভোগান্তির হাত থেকে মুক্তি কবে

ইসলাম রকিব: চুয়াডাঙ্গা রেলগেটের শব্দ দূষণ ভোগান্তির হাত থেকে সাধারন মানুষ যেন মুক্তিই পাচ্ছে না। শব্দ দূষণ বিষয়ে এলাকার দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা একাধিকবার রেল কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। এছাড়া সাধারণ জনগণ অত্যন্ত খুশি হয়েছিলো যেদিন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সরেজমিনে রেলগেটের আন্ডারপাস সড়কটি পরিদর্শন করেন এবং সড়ক নির্মাণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ প্রধান সড়কের রেলবাজার সংলগ্ন রেলগেট। এ রেলগেট যখন এনালগ ছিলো তখন রেলগেট সময় মতো পড়া না পড়া নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিলো। কখনো কখনো রেলগেট ফেলার কোনো লোক থাকতো না। অনেক পথচারী নিজের লালশার্ট খুলে তা নাড়িয়ে ট্রেন থামাবার উদাহরণও আছে। ঘটেছে ছোট-খাটো বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনাও। তবে লোকবলের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ায় সে সমস্যা দূর হলেও নতুন করে শব্দ দূষণ সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে রেলবাজার সংলগ্ন রেলগেট ও বেলগাছি রেলগেট এলাকায়।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ট্রেন স্টেশনে পৌঁছুনোর আগেই ডিজিটাল পদ্ধতির সাইরেন উচ্চ শব্দে বাজতে থাকে এবং ট্রেন স্ট্রেশনে পৌঁছিয়ে স্টেশন ত্যাগ করার বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলেও বিকট শব্দের এ সাইরেন বন্ধ হয় না। যা রেলগেটের উভয় দিকে দাঁড়িয়ে থাকা যান-বাহনগুলোর যাত্রীদের তো বটেই, রেলগেটের দুই পাশের হাফ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থানকারী ব্যবসায়ী ও বসবাসকারী মানুষের কান ঝালাপালা করে দেয়। আর ছোট শিশু, বৃদ্ধ ও হার্টের রোগীদের কি অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গতকাল চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার-রেলপাড়া সংলগ্ন রেলগেটে আটকে পড়া যাত্রী, যান-বাহনের ড্রাইভার, পথচারী ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রচণ্ডশব্দ দূষণ ভোগান্তিতে আছেন। এ অবস্থা থেকে তারা পরিত্রাণ পেতে চাই। চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি সংলগ্ন গেট এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদেরও একই অভিযোগ।
তারা বলেন, নিরাপত্তার জন্য রেলগেট পড়া ও সাইরেন দরকার আছে। তবে সাইরেন বাঁজিয়ে গেট ফেলে তার পর সাইরেন বন্ধ করে আবার গেট তোলার সময় সাইরেন বাঁজিয়ে তা বন্ধ করে দিলে জনগণের শব্দ দূষণ ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যেতো। কিন্তু সেটা না হয়ে লাগাতার শব্দ দূষণে পথচারী, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও এলাকায় বসবাসকারীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো প্রতিকার নেই বলেও তারা হতাশা প্রকাশ করে। স্থানীয় জনগণের জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১৪ থেকে ১৬ বার রেলগেট পড়ে। প্রতিবার ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রেলগেট পড়ে থাকে এবং সাইরেন বাঁজতে থাকে। আর যদি ডাবল ক্রসিং হয় তাহলে ভোগান্তির সময়টি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
গত কয়েকদিন আগে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনও আটকে ছিলেন এ রেলগেটে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টারের কার্যালয়ে গেলে স্টেশন মাস্টারকে পাওয়া যায়নি। দায়িত্বে থাকা সহকারী রেলস্টেশন মাস্টার নাছরিন ফারহানা জানান, একই সাথে দুই দিকের দুটি গেট ডিজিটাল পদ্ধতিতে পড়ে বলে ইচ্ছে করলেই গেট তোলা বা সাইরেন বন্ধ করা যায় না। তবে সাইরেন বন্ধ করার বিষয়ে তিনি সদোত্তর না দিতে পেরে বলেন, বড় স্টেশন মাস্টার নেই। তিনি থাকলে ভালো বলতে পারবেন এবং আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট জানলে ভালো হয়।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের পরপরই বেশ কয়েকটি ভালো কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে ছিলো চুয়াডাঙ্গা রেলগেটের আন্ডারপাস সড়কটি নির্মাণের কাজ। তিনি জায়গাটি সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছিলেন। তবে সে কাজের আর কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গাবাসীর দাবী এ ভোগান্তি থেকে এ জনপদের মানুষকে পরিত্রাণ দিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও হুইপ মহোদয়ের আন্তরিকতার বিকল্প নেই।