খালেদার গাড়িবহরের কাছে বোমা হামলা : বাসে আগুন

শনিবার যারা হামলা করেছিল তারাই এই হামলা চালিয়েছে : মির্জা ফখরুলের

স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ফেরার পথে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ফেনীর মহিপালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের কাছে পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুটি বাসে আগুন লেগে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ধাবমান গাড়িবহরের পেছনে ৫০ গজের মধ্যে সড়কের বিপরীত পাশে সংঘটিত এই সহিংসতার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। বোমা ও আগুনের ঘটনার পরপরই রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। তারা সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। পরে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িটি মোটরসাইকেলে পাহারা দিয়ে নিরাপদে ফেনীর সীমান্ত মোহাম্মদ আলী বাজার পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি নিরাপদে গুলশানের বাসভবনে পৌঁছান।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণ শেষে খালেদা জিয়া ঢাকায় ফেরার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটলো। গতকাল ফিরতি পথে খালেদা জিয়ার ফেনী সার্কিট হাউজে যাত্রাবিরতি করার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম থেকে রওনা হতে দেরি হওয়ায় সেই পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়। এর আগে গত শনিবার খালেদা জিয়া কক্সবাজারে যাওয়ার পথেও ফেনী জেলার সীমানার শুরুতে মোহাম্মদ আলী বাজারে তার বহরে হামলা হয়। ওই সময় ৮টি গণমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

গতকাল আক্রান্ত যাত্রীবাহী বাস দুটি হলো-শান্ত ক্ল্যাসিক পরিবহন ও চৌদ্দগ্রাম ট্রান্সপোর্ট। চৌদ্দগ্রাম ট্রান্সপোর্টের চালক হারুনুর রশীদ জানান, ‘স্থানীয় নাজির আহমেদ সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় অজ্ঞাত ২০/২৫ জন দুর্বৃত্ত গাড়ি লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে এবং গুলি ছোড়ে। তিনি বাসটির চালকের আসনে বসে ছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত তিনি বাস থেকে নেমে যান। এরপরই বাসটিতে আগুন ধরে যায়।’

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাড়ি দুটির চালক, হেলপারসহ ৪ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- গাড়িচালক আবদুল মালেক, হারুনুর রশিদ, পেয়ার আহাম্মদ ও মিলন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফেনীর পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ ও ৪ জনকে আটক করেছে। তদন্ত শেষে ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়ি ওই এলাকা অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গে পার্কিং করা দুটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা অথবা ককটেল নিক্ষেপ করে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনাটি পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ফেনী মডেল থানার ওসি রাশেদ খান জানান, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে বের করা হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করেছে। যারা গত শনিবার ফেনীতে হামলা করেছিলো তারাই এই হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান, বহরে থাকা তার গাড়ির কাছেই একটি বোমা পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও দলীয়সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শতাধিক গাড়ির বহরটি ৪টা ২০ মিনিটে ফেনী সীমান্তে এসে পৌঁছায়। সেখানে দলীয় নেতাকর্মী মোটরসাইকেল বহর নিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানায়। খালেদা জিয়ার গাড়িটি বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের মহিপাল ফিলিং স্টেশনের সামনে এলে সড়কের বিপরীত দিকে মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত পর পর দুটি বোমা ছুড়ে মারে। এ সময় গুলির আওয়াজও পাওয়া যায়। এতে সড়কের উল্টো দিকে চট্টগ্রামমুখী পার্কিং করা দুটি বাসে আগুন ধরে যায়। এসময় চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খালেদা জিয়ার গাড়িসহ বহরের ৩০-৩৫টি গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পর পরই এই হামলার ঘটনা ঘটে।