রাজনৈতিক দলের কার্যালয় কমিটির খোঁজে নামছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড, কার্যালয় ও কমিটির অনুসন্ধানে মাঠে নামছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। নিবন্ধন নেয়ার সময় রাজনৈতিক দলের যেসব কার্যালয় দেখানো হয়েছে, তা আদৌ আছে কিনা তা তদন্ত করা হবে। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা আছেন সে খবরও নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এক নেতার এক দল এবং দলীয় কার্যক্রম না থাকলে সেগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হতে পারে। এ রকম প্রায় এক ডজন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বাতিলের হুমকিতে আছে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছেন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের কমিটি, কার্যালয়, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণে নির্বাচন, ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব, পেশাজীবী-সহযোগী সংগঠনের সম্পৃক্ততা, তৃণমূলের মতামতে প্রার্থী নির্বাচন হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন বাতিলের এ ধরনের সতর্কতা দিয়ে গতকাল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৪০টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছে ইসি। চিঠিতে দলের নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালনসংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে ১৫ দিন (কার্যদিবস) সময় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিবন্ধনের কোনো বিধান লঙ্ঘিত হলেও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে। এ রকম হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে চিঠিতে।

এর আগে ২০১০ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন নামের রাজনৈতিক দলকে খুঁজে না পেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলা ইসি। পরে দলটি ইসির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এখনো অনেক দলকে মাঝে মাঝে খুঁজে পান না ইসি কর্মকর্তারা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর নির্বাচিত কমিটি ও মাঠ অফিসের কার্যক্রম ঠিকঠাক আছে কিনা তা যাচাইয়ে ইসির একটি বিশেষ দল তদন্তে নামবে। নিবন্ধনের সময় দেয়া শর্তপূরণ করতে না পারলে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কারণ দর্শানো নোটিস দিয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু হবে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর এ পর্যন্ত ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি এবং আদালতের রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে অতীতে অনেক জটিলতায় পড়েছে ইসি। দলীয় কার্যালয়ে ফোন করলে কাউকে পাওয়া যায় না, আবার অনেক দলের যেসব টেলিফোন নম্বর দেওয়া হয় তাও অকার্যকর। মোবাইলেও সাড়া পাওয়া যায় না। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা থাকলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। বাসাকেই দলের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে অনেক দল। সদ্যসমাপ্ত সংলাপের দাওয়াতপত্র দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলো ইসি। দলের অফিস খুঁজে না পেয়ে ফেরত এসেছেন ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, শর্তপূরণ করেই দলগুলো নিবন্ধিত হয়েছিলো। তাদের বেশকিছু বিষয় প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এজন্য আমাদের ঘোষিত কর্ম-পরিকল্পনা মেনে সর্বশেষ অবস্থা জানাতে নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়েছি। দলগুলোর কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর কমিশন কি সিদ্ধান্ত দেয় সে অনুযায়ী কাজ হবে। ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার আইনানুগ দ্বায় ইসির রয়েছে।

প্রতিবেদন চেয়ে আওয়ামী লীগবিএনপিসহ ৪০ দলকে চিঠি : নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়ে ইসির যুগ্ম-সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা) মো. আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত চিঠি ৪০টি দলের সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিবের কাছে গতকাল পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ৯০বি শর্তাদি প্রতিপালনের শর্তে দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। ৯০এইচ(ডি) অনুযায়ী ৯০(বি)-এর দফা ১(বি)-এর কোনো বিধান লঙ্ঘিত হলে দলের নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে। এ অবস্থায় শর্তাদি প্রতিপালনের বিষয়ে দলীয় সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিবকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ইসি সচিবালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।

নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন শর্তাদি : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়। শর্তগুলো হলো : ১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে যদি দলটির অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন; ২. যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পান। ৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সংবলিত দলিল থাকে। নতুন কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে শেষ শর্তটিই পূরণ করতে হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরপিও অনুযায়ী এ শর্ত পূরণের পর দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণে সুনির্দিষ্টি কয়েকটি বিধান নিবন্ধন বিধিমালায় রাখা হয়েছে, যা দলগুলোর নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ৯০বি (১)(বি)-তে বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয়সহ সব স্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে; ২০২০ সালের মধ্যে সব কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে; ছাত্র-শিক্ষকসহ পেশাজীবী কোনো সহযোগী সংগঠন রাখায় নিষেধাজ্ঞা; ওয়ার্ড-থানা-উপজেলা ও জেলা কমিটির মতামত নিয়ে কেন্দ্রীয় বোর্ড সংসদে প্রার্থী বাছাই করবে।

নিবন্ধন বাতিলের হুমকিতে ইসলামী দলগুলো : নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দলে ৩৩ ভাগ নারী প্রতিনিধি রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসলামী দলগুলো। এ ছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারলে দলগুলো নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। তাদের তথ্যমতে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নারী প্রতিনিধিত্ব দিন দিন বাড়লেও পিছিয়ে আছে ইসলামী দলগুলো। অনেক ইসলামী দলে ১ ভাগও নারী নেই। নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে এমন দলও আছে যাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। শর্ত পূরণে তাদের হাতে সময় আছে মাত্র সাড়ে তিন বছর।