প্রেমিক সেজে নারীপাচারের চেষ্টা ভেস্তে দিলো চুয়াডাঙ্গার দুই কলেজছাত্রী

মোবাইলফোনে মিথ্যা পরিচয়ে সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রস্তাবে ঢাকায় নেয়ার পর হাতে নাতে পাকড়াও প্রতারক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের কয়েক ছাত্রীর বিছক্ষণতায় হাতে নাতে ধরা পড়েছে এক প্রতারক। মোবাইলফোনে প্রেমের অভিনয় করে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঝিনাইদহ ডাকবাংলা গোবরাপাড়ার এক যুবতীকে ঢাকায় নেয়ার পরপরই প্রতারক ধরা পড়ে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক নিজেকে নারী পাচারকারীদের একজন বলেও আংশিক স্বীকার করেছে। সে হিসেবে গবরাপাড়ার যুবতীও অল্পের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। তার চোখ খুলে দিয়েছে মূলত চুয়াডাঙ্গার দুই সচেতন কলেজছাত্রী নাফিসা তাবাচ্ছুম তামান্না ও সোম্মজিতা স্রোতি।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ ডাকবাংলার গোবরাপাড়ার এক যুবতীর মোবাইলফোনে রিং আসে। অপরিচিত ব্যক্তি নিজেকে একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে। এরপর থেকেই শুরু প্রেম। একজন সাংবাদিক তাও আবার টেলিভিশনের, এরপর আজগুবি সব প্রশংসাসহ বিয়ের লোভনীয় প্রস্তাব। দু মাসেই যুবতী ওই প্রতারককে বিশ্বাস করে বসে। প্রতারকের কথা মতো গতকাল সকাল ৯টায় রয়েল এক্সপ্রেসের একটি কোচ যোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। ওই কোচেই ছিলো চুয়াডাঙ্গা সরকার কলেজের দু ছাত্রী। দুই ছাত্রী কোচে বসেই ওই যুবতীর মোবাইলফোনে কথা শুনে এবং তার আচরণ দেখেই বুঝতে পারেন কিছু একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। যুবতীর সাথে আলাপ জমিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। কথাবার্তায় কলেজ ছাত্রীদের সন্দেহ ঘণিভূত হয়। এরপর ওই কলেজছাত্রীরা সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করেন। সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়া ব্যক্তি সত্যিই সাংবাদিক কিনা তাও জানাতে চান। এতেই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। তখনই কলেজ ছাত্রীরা ওই যুবতীকে টোপ হিসেবে সামনে রেখে প্রতারক পাকড়াওয়ের সিদ্ধান্ত নেন। যা ভাবা তাই কাজ।
কোচ থেকে ঢাকা গাবতলির মাজার রোডে নামার পর প্রেমিকরূপী প্রতারককে সামনে আসতে বলে যুবতী। প্রতারক একটি হোটেলের ঠিকানা দেয়। সেই হোটেল যুবতী একা গেলেও পিছু পিছু পৌঁছায় কলেজছাত্রীরা। সেখানে হাতে নাতে প্রতারককে ধরে পুলিশে খবর দেয় তারা। দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান বলেছেন, কলেজ ছাত্রীসহ স্থানীয়রা ওই প্রতারককে ধরে পুলিশে দিয়েছে। যুবতী নিজেই বাদী হয়ে প্রতারণার অভিযোগে মামালা দিয়েছেন। গ্রেফতারের পর প্রতারক প্রথমে নিজের ঠিকানাও ভুল দেয়। সে নিজেকে কুমিল্লার বাসিন্দা বলে দাবি করলেও পরে সে জানায় তার নাম সহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল্লাহ। দুটি স্ত্রী ও ৪ সন্তান রয়েছে। প্রেমের ছলনায় যুবতীকে নিয়ে পাচারকারীদের ডেরায় পৌঁছে দিলে সে মোটাঅঙ্কের টাকা পেতো। কলেজের দুই ছাত্রী ওই যুবতীকে যেমন রক্ষা করেছে, তেমনই একজন প্রতারককে ধরতে সহায়তা করে সত্যিই প্রশংসার দাবিদার হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দুই ছাত্রী নিজেদের বিস্তারিত পরিচয় পত্রস্থ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, আমরা রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে জড়িত। এরই অংশ হিসেবে ঢাকায় এক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে আসার পথে যুবতীর দশা দেখে আমরা ওকে প্রতারকের কবল থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছি। এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্বেরই অংশ।