সাবধান! সামান্য ভুলে অপুরনীয় ক্ষতির শঙ্কা

মোবাইলফোনে ‘মিসকলা’ শব্দটা এখন প্রায় সকলেরই চেনা। অবশ্য মিসকলের দিন শেষ। খরচ কমার সাথে সাথে ওটার বেজেঝে বিদায় ঘণ্টা। তারপরও কিছু মিসকল মুসকি হাসি নিয়ে কারো কারো সেলফোনের নোটেফিকেশন টুনি যে জ্বলে ঠিকই। এর সুযোগ প্রতারকও পেতে বসে ফাঁদ। নানা পদের টোপে প্রতারকরা প্রায় প্রতিক্ষণেই কারো না কারো শিকার করছে। ছদ্মবেশে নারী নিজেকে কলেজছাত্রী কিম্বা প্রবাসীর স্ত্রী সেজে, পুরুষ প্রকৌশলী কিম্বা ডাক্তার অথবা অন্য কোন পেশার পদস্থ চাকুরে সেজে প্রতারণা যেমন বেশ পুরোন, তেমনই জিনের বাদশা বা অন্য কিছু সেজে প্রতারণা তো রয়েছেই। লটারির কথা বলে? সেটা অবশ্য অনেকটাই কমেছে। তবে দেহ দেয়া কিম্বা বিয়ের প্রলোভনে প্রতারণার পরিমানটা যেনো পূর্বের মতোই রয়ে গেছে। ঝিনাইদহ ডাকবাংলা গোবরাপাড়ার এক যুবতীর প্রতারিত হওয়ার বর্ণনা তারই সাক্ষ্য দেয়। অবশ্য চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দু’ছাত্রীর সচেতনতা ও তাদের দায়িত্বশীলতা নারী সমাজের অগ্রযাত্রারই অনন্য উদাহরণ।
প্রতারকচক্র তাদের নারী সদস্য দিয়ে আন্দাজেই একের পর এক মোবাইলফোনে রিং দেয়। বলে এটা কি অমকের নম্বর। কে বলছেন? রং নম্বর বলে প্রথমে কেটে দিলেও ওতো টুকু কথাতেই থাকে নারীর তারণ্যের উচ্ছাস। ওতেই গদ গদ হয়ে কারো কারো কাটে নির্ঘম রাত। তার পর? অনেকেই ওই নম্বরে সুযোগ মতো ফিরতি কল করে। খাতির জমাতে চায়। ব্যাচ- এতেই কেল্লা ফতে। নারী নিজেকে কলেজছাত্রী, হোস্টেলে থাকে অথবা প্রবাসীর স্ত্রী পিতার বাড়ি পড়ে আছে অতি কষ্টে। মিষ্টি মিষ্টি কথায় কয়েদিনেই জমে ওঠে ফোনালাপ, নারী ছোঁয়া দেয়ার ছলনায় ইচ্ছেমত ডেরায় ডেকে নিয়ে আটকে রেখে আদায় করে মোটা অংকের টাকা। এরকম উদাহরণ চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে বেশ ক’টা। আর পুরুষ প্রেমিক সেজে কিশোরী কিম্বা অষ্টাদশিকে ফুসলে নিয়ে দেহভোগসহ পাচার? তারও উদাহরণের অভাব নেই। ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তি ডাকবাংলার গোবরাপাড়ার যে যুবতী ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার বলে পরিচয় দেয়া প্রতাকের খপ্পরে পড়েছিলেন তিনি কলেজছাত্রী। মাত্র দু মাসের ফোনালাপ। এতেই বিশ্বাস স্থাপন করে পিতা মাতাসহ আপনজনদের ছেড়ে দূরপাল্লার বাসে চেপে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। একই কোচেই ছিলো চুয়াডাঙ্গার দু কলেজছাত্রী। ফোনে ওই যুবতীর আলাপচারিতা এবং আচরণ দেখে চুয়াডাঙ্গার দু কলেজ ছাত্রীর সন্দেহ হয়। ওই যুবতীর সাথে খাতির জমিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করে। যুবতীর কথাতেই সন্দেহ দানাবাধে। সত্যতা যাচাই করতেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়, যুবতী পড়েছে প্রতারকের খপ্পরে। চুয়াডাঙ্গার দু কলেজছাত্রী যুবতীকে নিশ্চিত বিপদের মধ্যে না ফেলে ওরা রক্ষার্থে পুলিশে খবর দেয়। প্রতারক পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, তার দুটি স্ত্রী আছে, আছে ৪ সন্তান। ওই যুবতীর কাছে যেসব পরিচয় দিয়েছে তার সবই ভুয়া। ঢাকায় নিয়ে ডেরা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারলেই তুলে দেয়া হতো খদ্দেরের হাতে। এ স্বীকারোক্তি শুনে যুবতী নিজেই বাদী হয়ে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছে।
নবজাতক যে সমাজে জন্ম নেয়, বড় হয়- সেই সমাজই তাকে ওই সমাজের মতোই মানবিক করে তোলে, শেখায় কখন কাকে কতটা কেনো বিশ্বাস করতে হয়। অধিকাংশ পরিবার সমাজের শিক্ষাটাকেই পরিপক্ক করে। আমাদের তথা বাঙলী সমাজ এতোটাই মানবিক যে, কেউ কারো দুঃখ দেখে, কেউ কারো কান্না দেখে নীরব থাকতে পারেন না যেমন, তেমনই বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কেউ পানি পিপাসার কথা হাক মেরে জানালে তাকে শুধু পানি নয়, তার সাথে মুড়িটাও দেয়া হয়। মুড়ি না থাকলে গৃহিনীর হাতের কাছে যা থাকে তাই-ই দেয়াটাই যেনো রেওয়াজ। মানবিকতা, সামাজিকতা। যদিও এই মানবিকতা, সামাজিকতার ওপর বিশ্বাসঘাতকার দফায় দফায় আঘাত করে আত্মবিশ্বাসটাই গুড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও সরল বিশ্বাস কিছুটা রয়েছে বলেই প্রতারকরা ফাঁদ পাঁতে। টোপও দেয় লোভনীয়। ভালোপাত্র বলে দাবি করা প্রতারকের বিয়ের প্রলোভনে পাতা ফাঁদে পা দেয়া যুবতীকে রক্ষা করার পাশাপাশি প্রতারক পাকড়াওয়ে অবদান রাখা দু ছাত্রীকে অভিনন্দন।