অন্যায় মেনে নেয়া মানে নিজেদেরই ক্ষতি ডেকে আনা

কোনো ঐতিহাসিক স্থান বা পর্যটনকেন্দ্র স্থানীয়দের সৌভাগ্যেরই প্রতীক। যেখানে ভ্রামণকারীর পদচারণা বাড়ে, সেখানে শুধু অর্থনৈতিক সচ্ছলতাই আসে না আর্থসামাজিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। সে হিসেবে অবশ্যই মেহেরপুরের মুজিবনগরবাসী সৌভাগ্যবান বটে। কিছু ত্রুটি বা কারো কর্মফলে যদি সেই সমাজের ভাগ্যের ওপর কুঠারাঘাত হয় তাহলে বুঝতে হবে ওই সমাজে দূরদর্শী নেতৃত্বের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। মুজিবনগরে শিক্ষা সফরের বহিরাগত ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার পর ছাত্রদের ওপর বখাটেদের হামলা কি সেই সংকটেরই নগ্ন বহির্প্রকাশ নয়? সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাণের মূল দায়িত্ব বর্তমানের সমাজপতি বা নেতৃত্বের ওপরই বর্তায়।
ঐতিহাসিক স্থানে বহিরাগতদের আগমনে স্থানীয়দের খুশি হওয়ারই কথা। ওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঐতিহাসিক স্থান বা পর্যটন কেন্দ্রে পরিবেশ সম্পর্কে দেশ বিদেশে ইতিবাচক প্রচারণা যেমন ভ্রমণে আসতে উৎসাহিত করে, তেমনই কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তির ন্যূনতম নেতিবাচক কোনো কাজের কারণে ভ্রমণকারীরা মুখ ফেরাতে শুরু করে। মুজিবনগর ঐতিহাসিক স্থান। মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার এখানেই শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নামকরণ হয় মুজিবনগর। ঐতিহাসিক এ স্থান পরিদর্শন বা শিক্ষাসফরে আসার পর বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ করা মানে মুজিবনগরের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত করা। সমাজের ওপর সমাজেরই কিছু তরুণ বুঝে না বুঝে আঘাত করে। এ আঘাত নীরবে মেনে নেয়া মানে নিজেদেরই ক্ষতি ডেকে আনা। সমস্যাটা সমাজের। বখাটেরা যতোই ক্ষমতাধর হোক আর ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকুক সমাজের সাধারণ মানুষ সোচ্চার হলে ওদের উৎপাত বন্ধ হতে বাধ্য। কেননা, সকল ক্ষমতার উৎস আমজনতা। যদিও জনতার রায় রয়েসয়ে তবুও তার আঁচ আগেই পাওয়া যায়। এ আঁচ উপলব্ধি করতে না পারাটাও অদূরদর্শিতার মধ্যেই পড়ে। মুজিবনগরের আমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে গোটা সমাজের ওপর।
বখাটেদের উৎপাত বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে কর্মরতদের একটু বেশি বেশি দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। অবশ্য এ দায়িত্বশীল করার জন্য দরকার নেতার বলিষ্ঠ নির্দেশনা। সমাজের প্রতি সমাজের সাধারণ মানুষের দায়ও অনেক। যে মেহেরপুরে রাস্তায় ইট নিক্ষেপকারী কিছু যুবককে ওই অপকর্ম থেকে নিবৃত করতে গিয়ে প্রকৌশলীকে শারীরিকভাবে লাঞ্জিত হতে হয়, সেই মেহেরপুরের মুজিবনগরে বখাটেদের উৎপাত কোন পর্যায়ে তা উপলব্ধি করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। সাধারণ মানুষ বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পেলেও নেতৃবৃন্দের আশু পদক্ষেপ নিশ্চয় মুজিবনগর ভ্রমণকারীদের নিরাপদ করতে সহায়ক হবে। অন্যথায় অনিবার্য বিপর্যয়।