সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা পেতে তিন জনের আবেদন: সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত

দলিয়ারপুরের খুশির নানা নানি চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তার কাছে লিখিত দিয়ে এড়িয়েছেন দায়

স্টাফ রিপোর্টার: না, সদস্য ভূমিষ্ঠ কন্যাকে নেবে না প্রসূতি কিশোরী খুশি। তার নানা দামুড়হুদা দলিয়ারপুরের আলী আকবর ও নানি নূরজাহান বেগম। এরা লিখিতভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজ সেবার প্রবেশন অফিসারের নিকট বলেছেন, ওই নবজাতকের ওপর আমাদের কারো কোনো দাবি নেই। নবজাতককে কেউ কোনোদিন দাবি করা হবে না। অবশ্য নবজাতকের মা কিশোরী খুশি এ রকম কোনো বক্তব্য দেয়নি। অপরদিকে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী খুশিকে ফুসলে যে ভগ্নিপতি রামনগর সেন্টারপাড়ার সার্টারমিস্ত্রি ইব্রাহিম সর্বনাশ করেছে তার অবশ্য গতকালও প্রকাশ্যে দেখা মেলেনি। তার বিরুদ্ধে পুলিশ তেমন কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। তবে শোনা যাচ্ছে স্থানীয় কিছু সাংবাদিক ও পুলিশের কথিত দালাল ইতোমধ্যেই টাকা পাওয়ার আশায় মুখিয়ে রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুশি নামের অন্তঃস্বত্ত্বাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বলে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যার পর রাত ৭টা ৩৬ মিনিটে কন্যা সন্তান প্রসব করে খুশি। পরদিন সকালেই খুশিসহ তার সাথে থাকা দু’বৃদ্ধা সটকে পড়ে। নবজাতককে ফেলে রেখে সরে পড়ার কারণে অনেকেরই সন্দেহ হয় ওই প্রসূতি নিশ্চয় অবৈধ কোনো সম্পর্কের শিকার হয়েছে। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন দামুড়হুদা উপজেলার দলিয়ারপুর গ্রামের অনেকেই খুশির বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করে। সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তান ফেলে সটকে পড়া প্রসূতির খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানা যায়, ওই খুশির বয়স ১৪ বছর। সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশও নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সে পরীক্ষায় অংশ নেয়। দীর্ঘদিন ধরে সে তার বান্ধবীসহ প্রতিবেশীদের বলে আসছিলো তার পেটে টিউমার রয়েছে। শরীরে জমছে পানি। এ কারণে ওই কিশোরীর অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার বিষয়ে তেমন কেউ সন্দেহ করেননি। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি, পরদিন শুক্রবার নবজাতক ফেলে পালানোর বিষটি গত পরশু শনিবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা বিস্তারিত প্রকাশ করে। ওইদিনই গ্রামের সাধারণ মানুষ খুশির পরিচয় ফাঁস করে। বিস্তারিত জানতে গেলে খুশি জানায়, তারই বড়বোনের স্বামী একই উপজেলার কলাবাড়ি রামনগর সেন্টারপাড়ার ইব্রাহিম ফুসলে তাকে সর্বনাশ করেছে। গতকাল এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পত্রস্থ হয়। গতকাল সমাজ সেবা অধিদফতর চুয়াডাঙ্গার প্রবেশনাল অফিসার জানান, বিষয়টি বিস্তারিত জানার পর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সাথে যোগাযাগ করা হয়। হাসপাতালেরই স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে কর্মরত দু’নারীর নিকট ওই নবজাতকের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেশ ক’জন ওই নবজাতককে পাওয়ার আশায় আবেদন করেছেন। বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। তিনি আদালতের মাধ্যমে সবকিছু সমাধানের সিদ্ধান্ত নেন। নবজাতককে নেয়ার জন্য গতকাল অনেকে ঘুরলেও শেষ পর্যন্ত তিনজন লিখিতভাবে আবেদন করেছেন, এদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরা হলেন, মেহেরপুর সুলতানা জামান, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম ও চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত মেহেরপুরের আব্দুল আলিম। আজ নতুন করে কোনো আবেদন না পড়লে আদালত ওই তিনজনের যে কোনো একজনকে নবজাতক কন্যাকে সন্তান হিসেবে লালন পালনের আদেশ দিতে পারেন।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, যে ভগ্নিপতি তার উঠতি বয়সী নাবালিকা শ্যালিকাকে সর্বনাশ করেছে তার বিরুদ্ধে কেনো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যার মাসহ তার মায়ের কোনো অভিযোগ নেই বলে জানা গেছে। অভিযোগ না থাকার ফলে পুলিশ গতকাল পর্যন্ত নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকলেও পুলিশের কথিত দালালসহ এলাকার কিছু যুবক নিজেদের সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে হুমকি ধামকি দেয়াসহ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে গতপরশু শনিবার এক যুবক নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে কিছু টাকা হাতিয়েও নিয়েছে। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।