বিপ্লব ও সংগতি দিবস

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর জেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল গণসমাবেশ করলেও চুয়াডাঙ্গা বিএনপির তিনটি অংশ পৃথকভাবে সমাবেশ করেছে। অপরদিকে ঝিনাইদহেও জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এদিকে ঢাকায় বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেছেন, শহীদ জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবদন করতে দেয়নি সরকার। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির শেখপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে গতকাল সকাল ১১টায় এক সমাবেশের আয়োজন করে। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য ও পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, বিএনপি নেতা রেজউল করিম মুকুট, আবু জাফর মন্টু, জেলা জাসাস সভাপতি শহিদুল হক বিশ্বাস, বিএনপি নেতা আতিয়ার রহমান লিটন, জেলা যুবদল নেতা আশরাফ বিশ্বাস মিন্টু, ইমরুল হাসান জোয়ার্দ্দার মুকুল, মামুন রেজা সবুজ, আরিফুজ্জামান পিন্টু, আতিয়ার রহমান লিটন, তৌফিকুজ্জামান তৌফিক, রেজাউল মল্লিক, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক এমএ তালহা, যুগ্ম-আহবায়ক মঞ্জুরুল জাহিদ প্রমুখ।
অপরদিকে এক প্রেস বিজপ্তিতে বলা হয়েছে, কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাজী রবিউল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এমএম শাজাহান মুকুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর বিএনপির অপরাংশের সভাপতি আওরোঙ্গজেব বেল্টু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজি আব্দুল খালেক, যুবদলের একাংশের আহ্বায়ক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহাজাহান খান, পৌর বিএনপি নেতা ইন্তাজ আলী, যুবদল নেতা সালমান হক উজ্জ্বল, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান প্রমুখ। এছাড়া স্থানীয় বিএনপির আরো একটি অংশ চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের অদূরবর্তী অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বলে ইমেলে প্রেরিত বার্তায় বলা হয়েছে। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পৌর কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনি। আবু বক্কর সিদ্দিক আবুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেলা বিএনপি’র সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুস সালাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপি’র সহ-সভাপতি খাইরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পিটু, যুগ্ম-সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে জেলা বিএনপির উদ্যোগে ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে শহরের বোসপাড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মাসুদ অরুণের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান ও আনছার উল হক, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস প্রমুখ। গণসমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এমএকে খায়রুল বাশার, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ সাঈদ আহম্মেদ, যুগ্ম-সম্মাদক জহিরুল ইসলাম বড়বাবু, সাংগাঠনিক সম্পাদক রোমানা আহম্মেদ রুমা, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দিন বিশ্বাস, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওবাইদুল্লাহ সেন্টু, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন মোল্লা, জেলা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক আব্দুর রহিম, পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি হাজি ফজলু খান, সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ, সহ-সভাপতি হাবিব ইকবাল, জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, জেলা তাঁতী দলের সভাপতি আরজুল্লাহ মাস্টার বাবলু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল কবির, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি শ্রী গুরুদাস হালদার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ, জেলা জাসাস’র আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান অশেষ, যুবদল নেতা জাহিদুল হক জাহিদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ ও আজিমুদ্দিন গাজী, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম-সম্পাদক আরমান আলী, ছাত্রদল নেতা আহমেদ রাজীব খান প্রমুখ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন গ্রামের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ থেকে সরকার বিএনপিকে বঞ্চিত করেছে। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এ দলীয় কর্মসূচীতে সরকার প্রতিহিংসাপরায়নতা দেখালো ।
অপরদিকে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ড্যাবের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এই ৭ নভেম্বরে প্রতিবারই আমরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি। কিন্তু অত্যন্ত দূর্ভাগ্য যে এবার সরকার আমাদেরকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা তার কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারিনি। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদেরকে নতুন করে শপথ নিতে হবে। জনতা আজ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তাতে অপশক্তির পরাজয় হবেই। আগামী দিনে জনতার বিজয় হবে। এদিকে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের কারণে জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিধি-নিষেধ রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলা ও পৌর বিএনপি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ হামলা করে। এ সময় অফিসের নীচে থাকা দু’টি মোটর সাইকেলে ভাংচুর করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপে অফিসের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে যায়। হামলার সময় অফিসের ভেতরে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনসহ নেতা-কর্মীরা আটকে পড়েন। পরে পুলিশের সহায়তায় নেতা-কর্মীরা নিরাপদ স্থানে চলে যায়।
মেহেরপুর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের লক্ষ্যে দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। সমাবেশের জন্য আমরা পুলিশ সুপারের কাছে অনুমতি নিয়েছিলাম। অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন অফিসে হামলা চালিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। মোশাররফ হোসেন পিস্তল দিয়ে দু’রাউন্ড গুলি ছোড়েন বলেও অভিযোগ করেন আমজাদ হোসেন।
এদিকে কয়েক দফা ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর বিএনপি কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তৃতায় আমজাদ হোসেন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর গণজোয়ার শুরু হয়েছে। এতে ভীতি হয়েই ক্ষমতাসীনরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আলোচনা সভায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল হক, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, পৌর বিএনপি সভাপতি মোরাদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন মেঘলা, উপজেলা যুবদল সভাপতি আক্তারুজ্জামান ও জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আব্দাল হকসহ নেতৃবৃন্দ। এদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ তুলে গাংনী শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা যুুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেন, গাংনী পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু, উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম-সম্পাদক মজিরুল ইসলাম, পৌর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাহিবুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা আল ফারুক, আশিকুর রহমান আশিক, ৭নং ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি জহুরুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তোহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভ শেষে উপজেলা যুবলীগ কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্যে গুলি বর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অফিসে জড়ো হয়। এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তারা মিথ্যা অভিযোগ করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে।
এদিকে জেলা বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন আয়োজিত অনুষ্ঠানও বাধায় ভেস্তে গেছে। গাংনী কার্যালয়ে আলোচনা সভা না করে জোড়পুকুরিয়া বাজারে গিয়ে জাভেদ মাসুদ মিল্টনসহ নেতাকর্মীরা জড়ো হন। সেখানে জোড়পুকুরিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেম্বর সাহাব উদ্দীনসহ তার লোকজন বাধা দেয়। এতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিরাপদে চলে যাওয়া হয়েছে বলে জানান জাভেদ মাসুদ মিল্টন। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের স্বৈরাচারী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।