সাইফুল ইসলাম পিনু মাথাভাঙ্গার আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র

সব কিছুরই শেষ আছে, জন্ম নিলে মরতে হবে। মরেই যখন যাবো তখন গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে জীবনটা পার করলেই হয়- এ যুক্তি পশুর ক্ষেত্রে খাটলেও মানুষের বেলায় নয়। জন্ম থেকে মৃত্যুাবধি যেটুকু সময়ই পাওয়া যায়, মহাকালের পথে পদচিহ্ন রাখতে পারাটাই স্বার্থকতা। ক’জনই বা তা পারে? কর্মক্ষেত্রে সফলতা মানেই যে স্বার্থকতা, তা নয়। মানবজনমের স্বার্থকতার ব্যাখ্যা বিশদ। এ বিশদে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে মাথাভাঙ্গা পরিবারের আকাশেই শুধু নয়, এলাকাবাসীর মানসপটেও প্রতিচ্ছবি হয়ে রয়েছেন যে মানুষ তার নাম সাইফুল ইসলাম পিনু। আজ তাঁর সশরীরে আড়াল হওয়ার পঞ্চম বার্ষিকী। শোকার্ত দিনে তারসহ মাথাভাঙ্গা পরিবারের ইহকাল ত্যাগ করা সকল সদস্য পাঠক শুভানুধ্যায়ী সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা।
সাইফুল ইসলাম পিনু চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। সংগ্রাম করেই লেখাপড়া শেখেন তিনি। খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ে ছাত্রজীবন থেকেই সংগ্রাম শুরু করেন। শুধু কি খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন, তিনি চুয়াডাঙ্গা কলেজটি জাতীয়করণেও অবিস্মরণীয় অবদান রেখে অনন্য ইতিহাস হয়ে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা থাকাকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিলেও পরাজয় মানতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচনে পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের রাজনীতি করতেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সাইফুল ইসলাম পিনু সত্যিই তুলনাহীন। রাজনীতিক হলেও দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকেই আলো ছড়িয়েছেন তিনি। দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রস্তাবিত সংখ্যায় অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ছাড়পত্র মেলে মূলত সাইফুল ইসলামকে সম্পাদক করার পর। ছাড়পত্র পেয়ে মাথাভাঙ্গার আনুষ্ঠানিক যাত্রার শুরু থেকে প্রায় একযুগ তিনিই সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শতকের শুরুতে সম্পাদনার দায়িত্বও প্রকাশক ঘাড়ে নিলে প্রধান সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ২০১২ সালের আজকের এই দিনে সকালে সকলকে কাঁদিয়ে অশরীরি সহযোগী হয়ে যান সাইফুল ইসলাম পিনু। তার এ আড়াল হওয়া মেনে নিতে না পারা মাথাভাঙ্গা পরিবার তাকেই প্রধান সম্পাদক পদে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে যতোদিন দৈনিক মাথাভাঙ্গা আছে ততোদিনই প্রধান সম্পাদক পদটি তার। প্রত্যাশা অনন্তকাল।
সাইফুল ইসলাম পিনুর চলে যাওয়ার ঠিক এক বছর আগে এ নভেম্বরের মধ্যভাগে ইহকাল ত্যাগ করেন তার সহধর্মিনী নাজমা আরা বেগম মমতাজ। তিনিও ছিলেন মাথাভাঙ্গা পরিবারের অগ্রসৈনিক। ১৯৯১ এর ২৬ মার্চ প্রস্তাবিত সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ছাড়পত্র পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১০ জুন। দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে আর সমাজ থেকে কুসংস্কার নামক অন্ধকার তাড়াবার প্রত্যয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা অবিচল। বহু চড়াই উৎরায় পেরিয়ে মাথাভাঙ্গাকে স্থানীয় মুখপত্র থেকে আঞ্চলিকে উন্নীত করার যে সংগ্রাম, এ সংগ্রামে পাঠককূলই যে মূল সাহস তাও মাথাভাঙ্গা পরিবারকে শিখিয়েছেন যিনি, তিনি সাইফুল ইসলাম পিনু। তার সততা, রেখে যাওয়া স্মৃতি, পরামর্শই মাথাভাঙ্গা পরিবারের পাথেয়। তার আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া প্রার্থনা।