দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে চতুর্থ দিনের বক্তব্য খালেদা জিয়ার

প্রতিহিংসায় নয়, ক্ষমায় বিশ্বাস করি

স্টাফ রিপোর্টার: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে চতুর্থ দিনের বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই যে, প্রতিহিংসায় নয়, ক্ষমায় বিশ্বাস করি। আমার এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি শেখ হাসিনার প্রতিহিংসামূলক ও বৈরি আচরণ সত্ত্বেও তাকে  ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তার প্রতি কোনো প্রতিহিংসাপ্রবণ আচরণ করবো না।

তিনি বলেন, আমি তাকে আহ্বান করেছিলাম আসুন রাজনীতিতে শোভন সহিঞ্চু আচরণ গড়ে তুলি। দেশের গণতন্ত্রের জন্য খুবই প্রয়োজন। ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন আমাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসামাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনের মতো দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া।আদালতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। এর আগে খালেদা জিয়া আবারো স্থায়ী জামিনের জন্য আবেদন করলে তা খারিজ করে দেয় আদালত। পরে বিচারক ১৬ নভেম্বর এ মামলার পরবর্তী সময়ে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। গত ২ নভেম্বর খালেদা জিয়া দু মামলায় স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে দিয়ে মামলার শুনানির দিন গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।

মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছান। এরপরই খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্থায়ী জামিনের আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। পরে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য শুরু করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, অবৈধ মঈন উদ্দীন ও ফখরুদ্দীন সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করলে আমি গৃহবন্দী থেকে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম এবং বিবৃতি দিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছিলাম। তিনি বলেন, কেউ কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন। কেউ শিক্ষা নেন না। কিন্তু যারা শিক্ষা নেন তারা সম্মানিত হন। আর যারা শিক্ষা নেন না তাদের জায়গা হয় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে।

খালেদা বলেন, চাইলে আমি তখন চুপ করে থাকতে পারতাম। অন্যায়কে আমি মেনে নিইনি। গৃহবন্দী অবস্থা থেকেই প্রতিবাদ করেছিলাম।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মামলার রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে, বিচারকরা স্বাধীনভাবে বিবেকশাসিত হয়ে আইনসম্মতভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম কি-না? আমাদের দেশের ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে বিচারের নামে অধিকার হরণের নমুনা দেখেছি। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকেও দুর্নীতির অভিযোগে কারাভোগ করতে হয়েছে। মরহুম মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, অলি আহাদের মতো জাতীয় নেতাদেরও কারাভোগ করতে হয়েছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে উপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কবিতা রচনা করায় রাষ্ট্রদ্রোহী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এছাড়া মাহত্মা গান্ধী, মাওলানা শওকত আলী, সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ ও জহরলাল নেহরুর মতো নেতাদেরকেও আদালতের রায়ে কারাভোগ করতে হয়। এছাড়া নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো মানুষদেরও বিচারিক সাজা দেয়া হয়। তথাকথিতও সেইসব রায়ের পেছনে যুক্তি, অজুহাত ও আইন দেখানো হয়। হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও সক্রেটিসের মতো মহামানবদেরও বিচারের নামে সাজা দেয়া হয়। এসব বিচারকে কি বিশ্ববাসী ন্যায়বিচার বলে মনে নিয়েছে?

খালেদা জিয়া আরো বলেন, ইতিহাস এসব রায়ে কী দেখেছে? অপরাধী হিসেবে তাদেরকে সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু ইতিহাস তাদের দিয়েছে গৌরব, মহিমা। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয়, আবার কেউ নেয় না। যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, মানুষ তাদের সম্মানিত করে। আর যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের ঠাঁই হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। তারা মানুষের ধিক্কারে পরিণত হন।

খালেদা জিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে আলোচ্য এ মামলাটি ইতিহাসের এক মূল্যবান উদাহরণ হবে। আমি আশা করি, এর জন্য আপনি নির্ভর করবেন সুবিবেচনা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহস ও সততার ওপর। তাহলে অনাগত দিন বলে দেবে আপনি সঠিক সিদ্বান্তটি নিতে পেরেছিলেন।