স্বচ্ছলতা পেতে দরকার উৎকর্ষতা মেলে ধরার পরিবেশ

ওটাইতো ভালো ছিলো, সবাই মিলে তেড়ে ধরে বা তীর ছুড়ে পশু মেরে সকলে মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়া হতো। তখন নিশ্চয় এখনকার মতো অভাবের তাড়নায় কাউকে আড়াল হতে হতো না, ক্ষুধার তাড়নায় আত্মঘাতী কিংবা পানিতে পড়ে মরে সিটকে থাকতে হতো না। যদিও অতীত টেনে এরকম দীর্ঘশ্বাস ছাড়া মানে মানবজাতির অগ্রযাত্রাকে অস্বীকার করা, তবুও সভ্যতার আবরণের আড়ালে থাকা অমানবিকতা কিংবা নিষ্ঠুরতা তো আর অস্বীকার করা যায় না।
মেহেরপুর গাংনীর সহড়াবাড়িয়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের এক পুরুষ অভাব ঘোচাতে না পেরে অভিমানি হয়ে নিরুদ্দেশ ছিলেন। ক’দিনের মাথায় তার মৃতদেহ একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর যখন দাফন প্রশ্নটি সামনে আসে তখন অর্থাভাবে সেটাও তার স্বজনদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে। মেহেরপুর পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান বিষয়টি জেনে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কাফন দাফনের টাকা দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
মানুষ কেন গরিব হয়? অভাবের তাড়নায় কেন মরতে হয়? এসব প্রশ্ন পুরোনো হলেও ঘুরে ফিরেই সামনে আসে সঙ্গতঃ কারণেই। দাস প্রথা গত হয়েছে বহু আগে। এখন কাজ করলে মজুরি মেলে। শারীরিক অক্ষমদের প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়। তা হলে ঋণের বোঝা কেন? কেনই বা ভিটে হারানোর ঝুঁকি? মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই ছুটতে থাকে। অসুস্থতা থেকে শুরু করে দাদন, মাদক, জুয়ো ও সুদখোরের বিষদাঁতই মূলতঃ পিছিয়ে দেয় অনেকের।
মেহেরপুর গাংনীর সহড়াবাড়িয়া গ্রামটি খাটো আবাদের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করা জনপদ। ওই গ্রামের একটি পরিবার দারিদ্র্যের কোষাঘাতে প্রাণহানীর মতো ঘটনা সত্যিই বেদনাদায়ক। অবশ্যই তার দায়গ্রস্থতা থেকে শুরু করে পিছিয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন। কেনোনা, সুন্দর সমাজ গঠনে শুধু উন্নয়নে অন্ধ হলে হবে না, পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে নিতে হবে। না, দয়া দাক্ষিণে কাউকে স্বনির্ভর করা যায় না, স্বচ্ছলতার উচ্ছ্বাস ছড়াতে দরকার সকলের উৎকর্ষতা মেলে ধরার সুযোগ।
অতীত আমাদের পাথেয় হলেও ফেরা বা ফেরানোর প্রত্যাশা মুর্খতা। বর্তমান হনন হলেও উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠনের শ্রেষ্ঠ বা উপযুক্ত সময়। সময় অপচয় মানেই সময়ের  স্রোতে পিছিয়ে পড়া। সুদখোর, মাদক আর জুয়োর আসর ওই পিছিয়ে পড়াদেরই হাতছানি দেয়। অনিবার্য করে পতন। সকলকে পরিকল্পিত পরিশ্রমে উদ্বুব্ধ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানে জোগান নিশ্চিত করা দরকার। তার আগে দরকার মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা।