জেলাকারাগারে অন্তহীন অনিয়মের মাঝে হঠাৎ নিয়মের ছোঁয়া

শুধু কি দেখা করানোর জন্য টাকা আদায়, দেখা করানো ঘরে দর্শনার্থীকে নেয়ার পর বিপরীতে বন্দীকে রেখে তার পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে টাকা আদায়েও বাধ্য করা হয়। আর ক্যান্টিনের নামে যে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে তা শুনলেই গা শিউরে ওঠে। এর মাঝে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের বিশেষ নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে হাতে নাতে তথা চাক্ষুস প্রমাণ পেয়েছেন। দোষ স্বীকার করা কারারক্ষী আনোয়োর হোসেনকে তার চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলাকারাগারেই নয়, দেশের অধিকাংশ কারাঅভ্যন্তরেই অনিয়মের অন্ত নেই। বন্দীদের খাবার দেয়া থেকে শুরু করে ভালোভাবে ঘুরে শোয়ার মতো জায়গা দেয়াতেও অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে। বন্দীর সাথে কেউ দেখা করতে গেলে দর্শনপ্রার্থীকে অসহায়ের মতো টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে বন্দীর ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এসবই করানো হয় মূলত বন্দীদের মধ্য থেকেই মনোনীত মেট ও সিআইডি মেটদের দিয়ে। ওরাই কারাঅভ্যন্তরের অঘোষিত হর্তাকর্তা। প্রতিবাদ প্রতিরোধের জো নেই। হাজতি বা কয়েদিদের কেউ মুক্ত হয়ে তেমন কাউকে অভিযোগ নিয়ে পদস্থ কর্তাদের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিকার প্রার্থনারও নজির মেলে না। আর বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ, ক’জনই বা ওদিকে নজর দেন? যাদের নিকটজন হাজতি বা বন্দী হয় তাদের কেউ কেউ গেলে পরিস্থিতির শিকার হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। কেউ কেউ অভিযোগও তোলেন। সম্প্রতি তেমনই কেউ জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলেই তো কারাগারের হালহকিকত দেখতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হঠাৎ পরিদর্শনের সুফলও মিলেছে। হাতেনাতে একজন কারারক্ষী ধরা পড়েছেন। তিনি নিজের দোষ স্বীকার করার সাথে সাথে বলেছেন, ওই টাকা তিনি একা পান না বা নেন না, ঊর্ধ্বতন অনেকেই নেন বা তাদের দিতে হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কারারক্ষীকে ধরে তার অনিয়মের ফিরিস্তিসহ জেল সুপারের নিকট তাকে পেশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন। সাথে সাথে তাকে তার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া করা হয়।
অনিয়ম একদিনে ব্যাপকতা পায় না। প্রতিরোধ প্রতিকার না থাকার কারণে তা সংক্রমিত হয়। জেলাকারাগারের ভেতরে-বাইরে অনিয়ম সংক্রমিত হয়ে অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে বলেই জেলা প্রশাসকের নিকট পর্যন্ত নালিশ পৌঁছেছে। জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই অনিয়মের কিঞ্চিত ধরা পড়েছে। এই ধরাপড়া এবং অনিয়মের দায়ে একজনের শাস্তি নিশ্চয় অন্যদের সুধরে সুপথে ফেরাতে বা রাখতে সহায়ক হবে। তবে পদস্থদের নৈতিকতার স্খলন রুখতে হবে। নজরদারিও অব্যাহত রাখতে হবে।