নিশ্চিত করতে হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে দলীয় সমাবেশে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি জানিয়েছেন, গণতন্ত্রে মতপার্থক্য থাকবে, তবে দেশের স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতেই হবে। তিনি বলেছেন, শুধু সেনা মোতায়েন করলেই হবে না, তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাউয়ার দিতে হবে। পাশাপাশি ইভিএম বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপেও বিএনপি এসব প্রস্তাব উত্থাপন করে। সমাবেশে চেয়ারপারসনের কণ্ঠে একই সুর ধ্বনিত হলো। ফলে সহায়ক সরকার ব্যতিরেকে বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না, সমাবেশের ঘোষণা থেকে এ বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক নানা আলোচনার মধ্যে নির্বাচনের বিষয়টি সর্বাধিক আলোচিত। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের এতোটাই বিপরীতে অবস্থান করছে যে, দলগুলোর দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অথচ দেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সর্বমহলে গ্র্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প থাকতে পারে না। এটা ঠিক যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে সব দলের ঐকমত্যও জরুরি। রাজনৈতিক নেতাদের বোঝা দরকার, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার খেসারত তো শেষ পর্যন্ত নানাভাবে দেশবাসীকেই পোয়াতে হয়। সুতরাং দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে, দেশবাসীর মনেও নানামুখী শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। দেশবাসীর এই শঙ্কা নিরসন করতে পারেন বিজ্ঞ রাজনীতিকরা, আর তা হতে পারে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
অনস্বীকার্য যে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন কৌতূহলের অন্ত নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছিলেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে ‘আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করা হবে’। এরপর জোরেশোরেই আগামী নির্বাচন নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত ইসি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে কি-না তা নিয়েও সংশয়ের কথা উঠেছে বিভিন্ন স্তরে। তবে এটা নিশ্চয়ই বাহুল্য নয় যে, আলোচনার মধ্যদিয়েই সুনির্দিষ্ট এবং সর্বজনগ্রহণযোগ্য একটি পথ বেরিয়ে আসতে পারে।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এটা যেমন ঠিক তেমনিভাবে রাজনৈতিক দলগুলোরও কর্তব্য ইসিকে সহযোগিতা দেয়া। কিন্তু সমঝোতার বিপরীতে দেশে চলছে রাজনৈতিক রেষারেষি। এ পরিস্থিতির ভেতর নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে বড় ধরনের সংঘাত এবং সঙ্কট তৈরি হবে দেশে-আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকমহল থেকে এমন সতর্কবার্তাও দেয়া হয়েছে। যে কারণে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখতেই পারেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী কঠোর অবস্থানে অনড় থাকায় নির্বাচন নিয়ে এই ধু¤্রজালের অবসান হওয়া যৌক্তিক।
দলগুলোর মধ্যে আস্থার সঙ্কটের কারণে বারবার দেশে অস্থিতিশীলতা নেমে আসবে, নির্বাচন নিয়ে অতীতের মতো জ্বালাও-পোড়াওয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে-এটা কারও প্রত্যাশা হতে পারে না। দেশে যদি গণতন্ত্র এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, জীবন ও সম্পদহানির মাধ্যমে জনগণকে রাজনৈতিক কলহের খেসারত দিতে হয়, তাহলে এ ব্যর্থতার দায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাঁধেই বর্তায়। নির্বাচন নিয়ে অতীতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং উদ্বেগের। যে রাজনীতি জনকল্যাণে প্রবর্তিত, তা কেন জনগণকে বিভ্রান্তি ভোগান্তি এবং চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে- এমন প্রশ্নও সাধারণ মানুষের। রাজনীতিতে জনকল্যাণের প্রকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরি। এজন্য নির্বাচন কমিশন যেমন সবার অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, তেমনিভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকেও ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।