আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই

ব্রিটিশ আমলে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চল ও ভারত একই দেশের অন্তর্গত ছিলো। স্বাভাবিক নিয়মেই দুই অঞ্চলের একক রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো। এমনকি ১৯৪৭ সালের পরে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্গত হওয়ার পরও এ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা অটুট ছিলো। কিন্তু ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পরে এই যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে পড়ে। সড়ক বা রেল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও দু’দেশের মানুষের যোগাযোগ ও চলাচল থেমে থাকেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে দু’দেশের মানুষকে। কিন্তু কয়েক দশক পরে ছিন্ন পথগুলো আবার যুক্ত হচ্ছে। খুব সম্প্রতি খুলনা-কোলকাতা ট্রেন সার্ভিস ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন হয়েছে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সকল কিছু ঠিক থাকলে এই ট্রেন চালু হওয়ার কথা। ১৭৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় খুলনার মানুষ কোলকাতায় পৌঁছুতে সক্ষম হবেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি এক দারুণ সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হবে। কোলকাতার বা পশ্চিমবঙ্গের মানুষও এই অঞ্চলে সহজেই ভ্রমণ করতে পারবেন। দু’দেশের পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্ধ হওয়া সকল সড়ক ও রেলপথই ক্রমশ উন্মুক্ত হবে। এছাড়া এখন থেকে ইতোমধ্যে চালু থাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসে যাত্রার পূর্বেই বিমানবন্দরের ন্যায় ঢাকা ও কোলকাতা রেল স্টেশনে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার কারণে যাত্রার সময় প্রায় তিন ঘণ্টা কমে গেছে, পাশাপাশি অবসান ঘটিয়েছে দীর্ঘ ভোগান্তিরও।

এ সকল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মানুষে মানুষে কিংবা রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বিভেদের দেয়াল বা সীমারেখা যতো কম থাকবে, ততোই মানবজাতির জন্য কল্যাণকর হবে। অন্যদিকে আঞ্চলিক সহযোগিতা যে সকল দেশের জন্যই জরুরি তা স্বীকৃত একটি বিষয়। একসময় রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সীমারেখা টানা হয়েছে, কখনো কখনো দেয়াল বা কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজকাল পারস্পরিক বা আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ইউরোপে তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে আসিয়ানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এ সকল আঞ্চলিক সহযোগিতার পূর্বশর্তই হলো এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশের নাগরিকের রয়েছে, রয়েছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদেরও। আমাদের অঞ্চলে সার্ক রয়েছে। কিন্তু এ সাফল্যের কথা খুব গর্ব করে বলার মতো নয়। কারণ এ অঞ্চলে মানুষের উন্মুক্ত চলাচলকে সহজভাবে গ্রহণ করা হয় না। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহ এ চলাচলের জন্য বাধাস্বরূপ। কিন্তু মৈত্রী এক্সপ্রেস কিংবা বন্ধন এক্সপ্রেসের মতো উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে অবিশ্বাস ও সন্দেহ ক্রমশ দূর হচ্ছে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এতে উভয় দেশের মানুষের প্রতি পারস্পরিক আস্থা তৈরি হবে এবং নানান অপ্রয়োজনীয় বাধাও অপসারিত হবে। এটি উভয় দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।  কারণ মানুষে মানুষে যোগাযোগই সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করে এবং হিংসার পরিবর্তে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে।