মন্দ বর্জনীয় না হলে ধরিত্রী কি এতোটা মায়াময়ী হতো

বিশ্বের সব দেশে মৃত্যুদণ্ড নেই। মৃত্যুদণ্ড থাকলেও দেশ ভেদে তা কার্যকর করার ধরনও ভিন্ন। কোথাও শিরোচ্ছেদ, কোথাও ফাঁসি, কোথাও ফায়ারিং স্কোয়াড। কিছু দেশে এখনো গবেষণা করে বের করা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর পদ্ধতি কোনটি কতোটা মোলায়েম। যদিও শাস্তি তাও আবার কোন পদ্ধতিতে কতোটা তুলনামূলক কম কষ্টদায়ক তা খতিয়ে দেখা কারো কারো মতে ঠাট্টারই সামিল। পশ্চিমা কিছু দেশে আরামনিদ্রার মাঝেই চিরনিদ্রা নিশ্চিত করে মৃত্যুদ- কার্যকর দেখানো হয়। তাকে কোন অপরাধে এই শাস্তি সেটা প্রচার প্রকাশে কমতি থাকে না।
অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়। অপরাধের মাত্রা অনুপাতেই আইন প্রণেতারা শাস্তিরও মাত্রাও নির্ধারণ করে দেন। খুন-ধর্ষণসহ এমন কিছু অপরাধ রয়েছে যার শাস্তি মৃত্যুদ-। এ দণ্ডাসর্বোচ্চই বটে। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় প্রকাশ্যে। একে বলা হয় শিরোচ্ছেদ। আমাদের দেশে অতোটা প্রকাশ্যে না হলেও বিষয়টি সমাজের স্বার্থেই গোপন রাখা হয় না। যার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হবে তার ও তার নিকটজনদের বিষয়টি আগেই জানিয়ে দেয়া হয়। আইনের দৃষ্টিতে বিচার ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দৃষ্টিতে আইনগত সার্বিক দিক দেখার পরই আসে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি। এরপরই চূড়ান্ত হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ। নিকটজনের সাথে শেষ স্বাক্ষাৎসহ বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতাও থাকে। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার মধ্যেই মূলত অপরাধ প্রবণতা রোধের বার্তা ছড়ায়। যে বার্তা অপরাধ প্রবণদেরও বহুক্ষেত্রে সুপথে ফেরাতে সহায়ক হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার দুর্লভপুর গ্রামের দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এদের অপরাধ এরা একই গ্রামের একজনকে খুন করেছিলেন। যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তাদের সাথে আরও একজনের একই অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন একই বিজ্ঞ আদালত। আবুল কালাম আজাদ নামক একজন আসামির সাজা মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাণভিক্ষাসহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি মুক্ত। প্রাপ্ত তথ্যমতে আরও দুজন যাবজ্জীবনপ্রাপ্তও পেয়েছেন ক্ষমা। আর প্রাণভিক্ষা বা ক্ষমা না পাওয়া দুজন সহযোগীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর গতকাল শুক্রবার দাফনকাজ সম্পন্ন করলেন এদের আত্মীয়স্বজন। প্রসঙ্গটি আলোচনায় প্রাসঙ্গিক বটে।
অবশ্যই বিশ্বসংসার সুন্দরের পূজারী। মন্দ বর্জনীয় না হলে ধরিত্রী কি এতোটা মায়াময়ী হতো? দাসপ্রথা উবে গেছে। দুর্ভিক্ষও দূর হওয়ার পথে। হিংসার বদলে ভালোবেসে ভালো কিছু করার প্রতিযোগিতার আয়োজনও হচ্ছে কোনো না কোনো সমাজে। এর সুবাতাস সর্বত্রে ছড়াতে কতক্ষণ? যদিও বৈষম্য সুন্দরের পথে বড় অন্তরায়। আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ যে সমাজে যতোটা পরিচ্ছন্ন, যে সমাজ ধর্মবর্ণ, দল-বল, জাতি-গোষ্ঠি ধনি-গরিবের মধ্য থেকে যতোটা বৈষম্য দূর করতে পেরেছে, সেই সমাজ নিশ্চয় ততোটাই সম্প্রীতির, অতোটাই সুন্দর।