মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বারের খুনি মোকিম ও ঝড়ুর লাশ নিজ নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার দুর্লভপুরের মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বার হত্যার আসামি আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ূর লাশ গতকাল শুক্রবার নিজ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ প্রায় দু যুগ পর গতকাল ১৬ নভেম্বর দিনগত রাত পৌনে ১২টায় তাদেরকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার দুর্লভপুরের মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বার হত্যার আসামি আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুকে গত ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাদের লাশ গ্রহণ করতে গতপরশু স্বজনরা যশোর কারাগারে উপস্থিত ছিলেন। মোকিমের লাশ গ্রহণের জন্য তার একমাত্র ছেলে মখলেছ, জামাই ও সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বার নুহু এবং ঝড়ুর লাশ গ্রহণের জন্য তার ছেলে তরিকুল ইসলাম, ঝড়ুর ছোট ভাইয়ের ছেলে আশিক, জামাই লিমন ও লিটন, সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বার আব্দুল মজিদ ও বেল্টু মেম্বার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির পর আব্দুল মোকিমের লাশ শনাক্ত ও গ্রহণ করেন তার ছেলে মকলেছ আলী ও গোলাম রসুল ঝড়ুর লাশ শনাক্ত ও গ্রহণ করেন তার ছেলে তরিকুল ইসলাম। সকল দাফতরিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ নিয়ে রাতেই বাড়ির পথে রওনা দেয় পরিবারের লোকজন। গোলাম রসুল ঝড়ুর লাশ বেতবাড়িয়ায় পৌঁছে ভোর ৫ টায়। জানাজা শেষে দাফন করা হয় বেলা ১১টায়। গ্রামের গোরস্থানেই লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ভোর ৬টার দিকে আব্দুল মোকিমের লাশ গ্রামে পৌঁছুনোর পর জানাজা শেষে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ভোলারডাঙ্গা গ্রামের গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। হত্যাকা-ের পর মোকিমের পরিবার মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ঝড়–র পরিবার বসবাস করছে আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামে।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল ম-লের মেজ ছেলে মনোয়ার হোসেন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দুবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন। বৃহত্তর অঞ্চলে তিনি কৃতি খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেশে তো বটেই, ভারতের পশ্চিম-বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলেও তিনি হায়ারে হা-ডু-ডু খেলেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দ্দারের বাড়িতে তাকে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থি কুপিয়ে হত্যা করে। ওইদিনই নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বারের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলার দীর্ঘ ১২ বছর পর ১৯৯৪ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে ৩ জনের ফাঁসি ও ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়। দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদ-াদেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ২জন হল দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়া। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিলসূত্রে এদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত একজন আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ২জন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দণ্ডাদেশ মওকুফ করা হয়। বাকি ২ জন ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামির দণ্ড বহাল থাকে। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২৩ বছর পর গতকাল ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অবশিষ্ট ২ আসামি মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দীর্ঘ প্রায় দু যুগ পর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নিহত মুক্তিযোদ্ধার স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।