সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। অন্যদিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে অনন্য উচ্চতা। কিন্তু গেলো অর্থবছরে কাক্সিক্ষত মাত্রায় ধান উৎপাদন হয়নি। হাওরে বন্যায় হাজার হাজার একর জমির ফসল ভেসে যাওয়ায় এবং অকাল বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাদ্য উৎপাদন। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় লক্ষ্য অর্জনে যেমন ব্যাহত হয়েছে, তেমনি চালের বাজারও চলে গেছে সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। গত কয়েকমাসে সাধারণ মানুষকে আয়ের অধিকাংশ ব্যয় করতে হয়েছে চাল কিনতেই। যে কারণে অন্যান্য খাতের ব্যয় সংকোচন করতে বাধ্য হয়েছে তারা। সরকারি পর্যায়ে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও উল্লেখ করার মতো সফলতা আসেনি। বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ৩/৪ টাকা কমালেও এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি বললেই চলে। তবে ইতোমধ্যে আমন ধান উঠতে শুরু করায় জনমনে আশার আলো জেগেছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, অচিরেই চালের বাজার সাধারণ মানুষের সহ্যসীমায় চলে আসবে।
হাওরে বন্যা এবং অকাল বৃষ্টিতে মূলত ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্যান্য খাত যেমন ভুট্টা, আলুসহ অন্যান্য খাতের উৎপাদন বেড়েছে। মাছ উৎপাদনও বেড়েছে। গত অর্থবছরে কৃষি খাতে ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির হিসাবে খাদ্যপণ্যের বাইরেও অন্যান্য কৃষিপণ্যের হিসাব করা হয়। তবে যেহেতু বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। সে কারণে ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা চালের বাজার অস্থির হলে এর নেতিবাচক প্রভাব জনজীবনে এসে পড়ে। তাই যে কোনো উপায়ে চালের বাজার সহনীয় রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই। এক্ষেত্রে সরকারি মজুদ বৃদ্ধি এবং সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির ব্যাপক উদ্যোগ রাখতেই হবে। বোরো মরসুমে বন্যা, অকাল বৃষ্টি এবং ব্লাস্ট রোগে ধানের যে ক্ষতি হয়েছে, এর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জনজীবনকে আক্রান্ত করেছে এটি শিক্ষণীয় হতে পারে। আগামীতে যাতে এ ধরনের বিপর্যয় সহজেই সামলানোর ব্যবস্থা নেয়া যায় এর আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। গত কয়েক মাসের অস্থিরতার পর আমন ধান উঠতে শুরু করায় বাজারে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছিলো এর লাগাম টানা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল। এটি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য একটি স্বস্তিকর সংবাদই বটে। এবার আমনের ফলন খুব ভালো হয়েছে।
আমনের বাম্পার ফলন চালের বাজারে স্বস্তি এনে দেবে স্বাভাবিক। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করা যেহেতু কারো পক্ষে সম্ভব নয়, সে কারণে আগামীতে এমন বিপর্যয় মোকাবেলার আগাম ব্যবস্থাও রাখতে হবে। চাল মজুদ করে বাজার অস্থিতিশীল করার সুযোগ যাতে কেউ না পায় সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের। আমন ধানের সুফল যাতে খুব দ্রুত জনজীবনে কার্যকর সুফল বয়ে আনে সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।