ভ্রাম্যমাণ আদালতে দালাল আকাশের জরিমানা : নাম প্রকাশে ক্ষুব্ধ তিনসহযোগির নগ্ম হামলা

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দালালচক্রের অব্যাহত উৎপাত : নালিশ পেয়ে পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর অভিভাবককে ভুলবুঝিয়ে বাইরের ডায়গোনস্টিকে রক্ত পরীক্ষা করানোর অপরাধে হুমায়ুন কবির আসমান ওরফে আকাশ নামের এক দালালকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রতারিত রোগী ও রোগীর অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার ওহিদুল ইসলাম সাথে সাথে অভিযুক্ত দালাল আকাশকে আটক করেন। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াশীমুল বারী পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত দালাল আকাশের ৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালের প্রধান ফোটকের দুপাশে থাকা দোকান অবৈধ স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে তা দ্রুত সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেন। গতরাতেই তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দ-িত আকাশ ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার কয়েকজন সহযোগির নাম প্রকাশ করে। এদের মধ্যে হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্তব্যরত সাঈদকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করে দেয়া হলেও রঞ্জু, তুষার ও সাইফুলকে তখন হাসপাতাল চত্বরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে নেয়ার পর পরই রঞ্জু, তুষার ও সাঈদ হাসপাতাল ক্যাম্পাসেই আকাশকে মারধর শুরু করে। ওদের নাম প্রকাশের কারণেই আকাশকে প্রকাশ্যে পিটুনির শিকার হতে হয়। সে চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ির আজিজুল হকের ছেলে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালের বহি:বিভাগে বেশ কিছু দালাল ঘুর ঘুর করে। ওরা সরলসোজা রোগী ও রোগীর সাথে থাকা তাদের নিকটজনদের ভুল বুঝিয়ে বাইরের ডায়গোনস্টিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর পাশাপাশি হাসপাতালের বদলে ক্লিনিকে বা নার্সিং হোমে ভর্তি করিয়ে কমিশনের নামে টাকা আয় করে। ক্ষতিগ্রস্থ হয় রোগী ও রোগীর লোকজন। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার দাবি উঠে আসছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন দালাল বিরোধী অভিযানও চালায়। এরই মাঝে গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা সোনাতনের মাসুম আলীর স্ত্রী মেনু খাতুন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল ইসলাম শিমুল রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালেরই ১১৬ নম্বর কক্ষে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ওই চিকিৎসকের কক্ষ থেকে রোগী মেনু খাতুন বের হতেই সামনে আঁড় হয়ে দাঁড়ায় দালাল আকাশ। সে ভুলবুঝিয়ে হাসপাতাল সড়কের এ্যাপেক্স হাসপাতাল ও ডায়গোনস্টিকে নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ২শ টাকা বিল করে। ওই রোগী রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাসপাতালে নিয়ে আনুমানিক ১১টার দিকে চিকিৎসককে দেখালে চিকিৎসক প্রশ্ন তোলেন, কেন বাইরে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হলো? রোগী বিস্তারিত জানান। এর পরপরই রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে একই চিকিৎসকের নিকট পৌছান চুয়াডাঙ্গা সরিষাডাঙ্গার আবুল কাশেম। তিনি তার মেয়ে আসমা খাতুনের চিকিৎসার জন্য ওই চিকিৎসকের নিকট গেলে একইভাবে হাসপাতালের নির্দিষ্ট কক্ষে রক্ত পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। অথচ এ রোগীর রক্তও ওই এ্যাপেক্স থেকে পরীক্ষা করানো। কেনো? প্রশ্ন তুলতেই আবুল কাশেম বিস্তারিত জানান। সাথে সাথে পুলিশে নালিশের আহ্বান জানানো হয়। কর্তব্যরত পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ওহিদুল ইসলাম অভিযোগ পেয়ে কালবিলম্ব না করেই গ্রেফতার করেন দালাল আকাশকে। পরিচালিত হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে ওইসব ডায়গোনস্টিকে পরীক্ষা করাতে পারলে বিশেষ হারে কমিশন পায়। এ কারণেই আকাশ, সাঈদ, রঞ্জু, সাইফুল ও তুষারসহ অনেকেই এ দালালির কাজ করে বলে জানায়। এসব তথ্য পেয়ে ভ্রম্যমাণ আদালত আকাশের সহযোগিদেরও ধরার আদেশ দেন। সাঈদকে পাওয়া গেলেও অন্যদের তখন হদিস মেলে না। দালাল হুমায়ুন কবির আকাশের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ জরিমানার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ত্যাগের সময় হাসপাতালের প্রধান ফটকের দু ধারে থাকা দোকান গুলো অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার নিদের্শ দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে নেয়ার কিছুক্ষণের মাথায় হাসপাতাল কম্পাউন্ডেই রঞ্জু, সাঈদ ও তুষার আকাশকে মারপিট শুরু করে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে।