ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে সরকার ব্যাংক ঋণ দেবে

চুয়াডাঙ্গায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া
আমাদের দেশকে আমাদেরকেই এগিয়ে নিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া বলেছেন ‘উন্নত হতে হলে সুশিক্ষিত হতে হবে। যেখানে মানুষের সাথে মেশিনের সম্পর্ক থাকে সেখানে অনিয়ম হবে না। ঘরে বসে আন্তর্জাতিকমানের টাকা আয় করতে হবে। ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সার হোন, ঘরে বসে আয় করেন। আমাদের দেশকে আমাদেরকেই এগিয়ে নিতে হবে।’ গতকাল রোববার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) অর্জনে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুর রাজ্জাক, জেলা পরিষদের সচিব নুরজাহান খানম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ ও অধ্যক্ষ (অব.) সিদ্দিকুর রহমানসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রধানগণ, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি লোকমান হোসেন মিয়া আরো বলেন ‘দেশে আকিজ ও বসুন্ধরার মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩-৫ লাখ টাকা বেতনে অনেকে চাকরি করছেন। এ ধরনের ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান অত্র এলাকায় গড়ে উঠলে সরকার ব্যাংক ঋণ দেবে। এ এলাকার চাহিদা মতো উৎপাদন করেন। সরকার রাস্তাঘাট তৈরি করে দেবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ১০ বছর পর আর বিদেশে যাবে না। ঢাকায় গাড়ি চালকদের চাহিদা রয়েছে। জেএসসি পরীক্ষার পর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বা টিটিসি থেকে ড্রাইভিং শিখে চালক তৈরি করেন। মানুষ নিজে থেকে মোটিভেশন হতে হবে। যে টাকা কোনো কাজেই আসে না, সেই টাকা দিয়ে কি হবে? উল্টোপাল্টা রাস্তায় টাকা কামাই করে সেকেন্ড হোমে শান্তি নেই। সুইজ ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ কি? সব মানুষের কিছু নৈতিকতা থাকা দরকার। যে পরিবারের বাবা-মায়ের মধ্যে শান্তি নেই, সেখানে ছেলে-মেয়েরা শান্তি পাবে না। মাদক থেকে নিজের সন্তানকে দূরে রাখুন এবং সমাজের অন্য ছেলে-মেয়েরা ভালো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখেন। যুবসমাজ মাদকের পথে চলে গেছে, মাদক যদি ভালো হয়, তাহলে সবাই খায়। না হলে সবাই বর্জন করি। আজ থেকেই তা শুরু করতে হবে। শুধু টাকা দিয়েই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় না। ওদের প্রতি যতœশীল হতে হবে। দেশকে ভালোবাসেন এবং বিদেশকে ভালোবাসেন। নিয়ন্ত্রিত পরিবার থাকা দরকার।’
টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) অর্জনে ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে সকল প্রকার বনভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়ন, বনভূমি উজাররোধ, ক্ষতিগ্রস্থ বনভূমির জমি পুনরুদ্ধার, বনায়ন ও পুনঃবনায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি করতে হবে।
সকল বয়সী সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ। সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জেন্ডার সমতা অর্জন ও সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন। সকলের জন্য পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। সকলের জন্য সাশ্রয়ী নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা। সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। অভিঘাত সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নে প্রবর্তন এবং উদ্ভাবনার প্রসারণ। অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাতসহনশীল এবং টেকসইনগর ও জনবসতি গড়ে তোলা। পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরণ নিশ্চিত করণ। স্থলজ বাস্ততন্ত্রের পুর্নরুদ্ধার ও সুরক্ষা প্রদান এবং টেকসই ব্যবহার পৃষ্ঠপোষণা, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, মরুকরণ মোকাবেলা, ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় পুনর্রুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র হ্রাস প্রতিরোধ।
এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন অভিষ্ট ও লক্ষ্যসমূহ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় ও প্রক্রিয়াগত দিক সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় ১০টি গ্রুপে জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ১শ জন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এসডিজি ও এমডিজি সম্পর্কে ধারণা এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। পরে ১০টি গ্রুপ স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অভিষ্টের ওপর প্রেজেন্টেশন তৈরি করে। গ্রুপগুলো স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অভিষ্টের লক্ষ্যমাত্রা, বাধা, বাধা উত্তরণেকরণীয় দিক এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে। গ্রুপগুলো তাদের প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে পুনরায় জেলার চার উপজেলায় বিনিয়োগের ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের পাশাপাশিকরণীয় দিকগুলো একটি আর্ট পেপারে উল্লেখ করে উপস্থাপন করে। কর্মশালার পর অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসডিজি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা আয়োজক প্রতিষ্ঠানের।