শাসন করতে গিয়ে গলা টিপে হত্যা করে মা

আলমডাঙ্গার তিয়রবিলার শিশু রিয়াজ হত্যার রহস্য উম্মোচন

স্বামীর দায়ের করা মামলায় স্ত্রী গ্রেফতার দেখালো পুলিশ
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: অবশেষে তিওরবিলার বিদ্যূতস্পৃষ্ট হয়ে ৮ বছরের শিশু রিয়াজের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। অসাবধানতাবশত মায়ের হাতেই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে শিশু রিয়াজের। লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পুলিশ গতকাল রোববার নিহত শিশুর মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শিশুটির মা জোছনা খাতুন শাসন করতে গেলে কীভাবে ছেলের মৃত্যু ঘটে সে কাহিনীর আদ্যপান্ত পুলিশের নিকট স্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত নিহত শিশুর বাপ বাদী হয়ে মায়ের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলেন।
জানা গেছে, তিওরবিলা গ্রামের কুঠিপাড়ার বাসিন্দা শাবান আলীর ৮ বছরের শিশুপুত্র রিয়াজ গত ২২ জুলাই সকালে নিজেদের ঘরের ভেতর মরে পড়েছিলো। সে সময় পরিবার ও প্রতিবেশিরা দাবি করে সকালে বিদ্যুতের তার নিয়ে শিশুটি খেলছিলো। অসাবধানতাবশত সে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়। এক পর্যায়ে কাঁপতে কাঁপতে সে মারা যায়।
মৃত শিশুটির গলায় একটা কালশিটে দাগ ছিলো। তবে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলে যেভাবে শরীরে পোড়ার দাগ থাকার কথা, তা ছিলো না। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় আলমডাঙ্গা থানার এসআই একরামুল হক সে সময় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা মর্গে প্রেরণ করেন। ওই দিনই এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, মৃত্যুর ৩ মাস পর আসল মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হলো। গত ২২ অক্টোবর শিশুটির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়। ডাক্তার ওয়ালিউর রহমান নয়ন, ডাক্তার আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ ও ডাক্তার কানিজ নাইমার সমন্বিত বোর্ড এ রিপোর্ট প্রদান করে। রিপোর্টে শিশুটিকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই ময়নাতদন্ত রিপোর্টটি আলমডাঙ্গা থানায় পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত অফিসার আলমডাঙ্গা থানার এসআই একরামুল রিপোর্ট অবগত হয়ে গতকাল ১৯ নভেম্বর সকালে নিহত শিশুর বাপ-মাকে থানায় নিয়ে আসেন। মা জোছনা খাতুনকে (২৭) ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে অকপটে ঘটনার আদ্যপান্ত খুলে বলে পুলিশের নিকট। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। জোছনা খাতুন জানান, তাদের ২ শিশুপুত্র ছিলো। রিয়াজ বড়, বয়স ৯ বছর। আর ছোট হিরাজ, তার বয়স মাত্র ৬ বছর। ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ২২ জুলাই সকাল ৮টার দিকে দুই ভাই বিয়ারিং চাকার গাড়ি নিয়ে গোলযোগ করছিলো। বড় ছেলে রিয়াজ ছোট ছেলে হিরাজকে মারধর করেছিলো। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে জোছনা খাতুন বড় ছেলে রিয়াজকে হাত ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে যায়। রেগে গিয়ে প্রথমে গালে চড় মারে। তারপর গলা টিপে ধরে। এ ঘটনার পর পরই রিয়াজের গলা দিয়ে ঘর ঘর শব্দ বের হতে থাকে। ভয় পেয়ে জোছনা খাতুন দ্রুত ছেলের গলা ছেড়ে দেয়। সে সময় রিয়াজ ঘরের মেঝেতে পড়ে যায়। পড়ার সাথে সাথে তার মৃত্যু ঘটে।
এ সময় জোছনা খাতুন আরও জানায়, ওই ঘরের মধ্যে বিদ্যুতের অনেক তার পড়ে ছিলো। তিনি ছেলে মরার পর চিৎকার করে কানাকাটি করলে প্রতিবেশিরা ছুটে যান। তারা মৃত ছেলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে কীভাবে মারা গেলো তা জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু জোছনা খাতুন কাউকে আসল ঘটনা বলতে পারেননি। প্রতিবেশিরা ধারণা করে নিয়েছিলো যে, সম্ভবত বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে শিশুটি। সে সময় সকলেই শিশুটির মৃত্যু বিদ্যুতস্পৃষ্টে হয় বলে প্রচার করেছিলো। নিজের হাতে সন্তানকে হত্যার কথা জোছনা খাতুন এতদিন কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারেননি। এমনকি নিজের স্বামীকেও না। শুধু নিজে নিজে অসহায়ের মতো কেঁদেছেন। এ কয়েক মাস ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করতে পারেননি। শুধু ছোট ছেলের জন্যই বেঁচে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। কোনোভাবেই সন্তান মরে যাক, তা জোছনা খাতুন চাননি। প্রথম সন্তান কত আদরের ছিলো উল্লেখ করে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সবকিছু জানার পর গতকাল বিকেলে নিহত শিশু রিয়াজের বাপ সাবান আলী বাদী হয়ে স্ত্রী জোছনা খাতুনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আজ সোমবার সংশ্লিষ্ট মামলায় জোছনা খাতুনকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।