তবে কি ঘটনার আড়ালে আরো ঘটনা লুকিয়ে রয়েছে?

ঘটনাটা ধামাচাপা পড়েই গিয়েছিলো প্রায়। বিদ্যুতস্পৃষ্টে শিশু রিয়াজের মৃত্যু হয়েছে বলে চালানো প্রচারণা প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় পুলিশ বিশ্বাসও করতে শুরু করেছিলো। এর এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদেরই একজন সেলফোনে মাথাভাঙ্গায় খবর দেন। তিনি ঘটনার আড়ালে ঘটনা লুকিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে ন্যূনতম তদন্তটুকু যাতে হয় সে রকম ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। এরই প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তাকে জানানোর সাথে সাথে তিনি অস্বাভাবিক মৃত্যু যেহেতু, সেহেতু ময়নাতদন্তের পদক্ষেপ নিতে অধীনস্থ কর্তাদের নির্দেশনা দেন। ব্যাস। তাতেই ৮ বছরের শিশু রিয়াজের প্রকৃত মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের দরজাটা খুলে যায়।
ঘটনাটি তিন মাস আগে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার প্রত্যন্ত পল্লী তিয়রবিলা কুঠিপাড়ায় ঘটে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পুলিশ শিশু রিয়াজের মা জোসনাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করে বলেছেন, তিনি নাকি তার সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে গলাটিপে ধরে মেরে ফেলেছেন। এ মর্মে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডও করা হয়েছে বলে গতকাল পত্রপত্রিকায় বেশ গুরুত্বসহকারেই তুলে ধরা হয়েছে। একজন মা তার সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে এমনভাবে গলাটিপে ধরলো যে মরেই গেল? নাকি ঘটনার সাথে আরো কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে? প্রশ্নটি অবশ্যই অসঙ্গত নয়। যে মা তার সন্তানকে হত্যা করার পর বৈদ্যুতিক কিছু তার মৃতদেহের ওপর ছিটিয়ে রেখে বিদ্যুতস্পৃষ্টে সন্তান মারা গেছে বলে প্রচার করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন, তিনি যে আরো কিছু সত্য আড়ালের করছেন না তা অবিশ্বাস করবেন কীভাবে? যে শিশু সন্তান তার পিতার সাথে ভোরে গ্রামসংলগ্ন বিলে মাছ ধরতে যায়, সেই সন্তান বাড়ি ফিরে কেন মায়ের অতিমাত্রায় শাসনের শিকার হয়? তবে কি ঘটনার আড়ালে আরো ঘটনা লুকিয়ে রয়েছে?
একটি সত্যকে মিথ্যার আবরণে আড়াল করতে হলে অনেকগুলো মিথ্যার মালা সাজাতে হয়। তারপরও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সত্য প্রকাশ পায়। তিয়রবিলার শিশু রিয়াজের পিতা-মাতা হতদরিদ্র। গ্রামের একপ্রান্তে বসবাস। শিশু রিয়াজ বিদ্যুতস্পৃষ্টে মারা গেছে বলে প্রতিবেশীদের মধ্যে প্রচার করা হয়। গ্রামেরই ক্যাম্প পুলিশে খবর দেয়া হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের তোড়জোড় চলে। এরই মাঝে পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তার নির্দেশে শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেয়া হয়। ময়নাতদন্তে যখন স্পষ্ট শিশুর মৃত্যু বিদ্যুতস্পৃষ্টে নয়- গলাটিপে শ্বাসরোধে, তখন মায়ের স্বীকারেক্তিতেই পুলিশি তদন্ত সীমিত না রেখে বিষদে দৃষ্টি দেয়ার দাবি যুক্তি রাখে।