চেনা মানুষ আচমকা অচেনা হলে কে ঠেকাবে বিচ্ছেদ?

তথ্যটা চমকে ওঠার মতোই। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এক বছরে যে সংখ্যক বিয়ে সম্পাদন হয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক বিচ্ছেদ হয়েছে। এ পরিসংখ্যান নিশ্চয় স্বস্তিদায়ক নয়। যদিও পত্রস্থ তথ্য এক বছরের বিয়ে এবং বিগত বহুবছরের বহু বিয়ের মধ্য থেকেই তথা নতুন পুরোনো মিলেই ওই বিচ্ছেদের চিত্র। তবুও বিচ্ছেদ সংখ্যাটা হতাশার। এটা সামাজিক সমস্যা, সামাজিক রোগ। তবে সমাজের কোনো রোগই অনিরাময়যোগ্য নয়। অতীত বিশ্লেষণ করলে সেটাই দাঁড়ায়। সে হিসেবে প্রকৃত কারণ শনাক্ত করে সঠিক দাওয়ায় দিতে পারলে বিচ্ছেদ নামক রোগ তো দূরের কথা, কোনো রোগই থাকার কথা নয় সমাজে।
মানুষ সমাজ ছাড়া চলতে পারে না। যে সমাজে মানুষ বাস করে সেই সমাজের সকল প্রকার মানদ- ওই সমাজের মানুষই পরম্পরায় গড়ে তোলে। এখনও এমনকিছু সমাজ রয়েছে যে সমাজের মানুষ কিছুতেই বুঝতে চায় না, পৃথিবী গোল। ওরা সেই সোনাতন বিশ্বাস থেকে টলতে বিন্দুমাত্র রাজি নয়। ‘পৃথিবী চাকতির মতো, চারটি হাতির পিঠে, হাতিগুলো দাঁড়িয়ে কচ্ছপের ওপর।’ এরকম ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়েও ওরা বিজ্ঞানের এই রমরমা যুগে সম্মেলন করে। শুধু কি তাই? এমন কিছু সমাজ রয়েছে যে সমাজে বিয়ে বা বিচ্ছেদ বলতেও কিছু নেই। আর আমাদের সমাজ? আমাদের পারিবরিক বন্ধন? বিশ্বের বহু সমাজ তথা বহু দেশের বহুজনজাতির কাছেই ঈর্ষন্বীয়। অথচ এই গর্বেও পড়ছে এখন বিচ্ছেদের কলঙ্ক। ঘরে বাইরে বাড়ছে কষ্ট।
আমাদের সমাজেই এক সময় মেয়েদের বয়স বারো হওয়ার আগেই প্রায় দ্বিগুন বয়সের পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়ার রেওয়াজ ছিলো। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে মানেই বাসরে ধর্ষণ, কুড়িতে বুড়ি হওয়া জেনেও ওটাই নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হতো। এখন? না পারে মানতে, না পারে সইতে। বহুক্ষেত্রেই বিচ্ছেদই হয়ে ওঠে সমাধান। বাল্যবিয়ে ক্ষতিকর। ফলে তা রোধে বিশ্বজুড়েই সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এ আঁচ বা উষ্ণতা আমাদের সমাজকেও সুন্দরের দিকে নিতে সহায়তা করছে। বখাটে উত্ত্যক্তকারীর উৎপাত, জীবন সম্পর্কে বুঝতে না বুঝতে বিয়ের আসনে বসতে বাধ্য হওয়া কিংবা নানাভাবে প্রাভাবিত হয়ে অপূর্ণ বয়সেই নিজেদের নায়ক-নায়িকার আসনে বসানোর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বাল্যবিয়ের মূল কারণ।
প্রেমে বিয়ে দাম্পত্য বিচ্ছেদের ঝুঁকি বেশি। কেন? কারণ বিয়ের আগে যুবক থাকে প্রেমিক। বিয়ের পর বাসরেই প্রেমিক হয়ে যায় স্বামী। বাল্যবিয়ের বাসরে স্বামী হয় ধর্ষক। প্রেমিক যখন স্বামী, স্বামী যখন ধর্ষক তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে সংঘাত। চেনা মানুষ যখন আচমকা অচেনা হয়ে যায় তখন কে ঠেকাবে বিচ্ছেদ? এটা সামাজেরই সৃষ্ট মানদ-ের খেসারত। যদিও বিয়ের আগে বোঝাপড়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে ভালোবাসেন অনেকেই। অথচ তারাই ভুলে যান পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষকে স্বামীতে রূপান্তর হওয়াটাই স্বভাবগত। ধুতে হবে এ স্বভাব। এগুতে হবে নারীদের। রুখতে হবে বাল্যবিয়ে।