রোহিঙ্গা সঙ্কট যৌক্তিক সমাধান খুঁজে পাবে

রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের সরকার নিজেদের অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু সেই পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে আসেমের (এশিয়া-ইউরোপ মিটিং) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। মিয়ানমারের নেপিডোতে অনুষ্ঠিত দু’দিনের এ বৈঠকে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন। পরিস্থিতিগত কারণে সেখানে রোহিঙ্গা সংকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এশিয়া-ইউরোপের ১৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির রুদ্ধদ্বার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। তার সাথে বাংলাদেশ, চীনসহ অনেক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পৃথক বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এসব বৈঠকের পর অনেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে শিগগিরই রোহিঙ্গা সংকট একটি যৌক্তিক সমাধান খুঁজে পাবে।

গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এসে দেশটির সরকার, বিশেষ করে সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছিলো। তাদের জীবন ধারণের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করে আসছিলো। চূড়ান্তভাবে প্রান্তিকীকরণের শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়তেই থাকে। তেমনি একটি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ছিলো গত আগস্টে সেনা চৌকিতে হামলা। এরপরই সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে বর্বরোচিত হামলা শুরু করে তা বিশ্ব ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। জাতিসংঘ একে ‘জাতিগত নিধনে’র প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে। অনেক বিশ্বনেতাই একে গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ অবস্থায় প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সোয়া ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। সারা বিশ্ব মিয়ানমারের এমন ভূমিকার তীব্র সমালোচনায় মুখর হয় এবং নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায়। মিয়ানমার এ পর্যন্ত নানাভাবে নিজেদের দায়দায়িত্ব অস্বীকারের চেষ্টা করে আসছিলো। আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার নির্যাতন বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এবং আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে কিছুটা হলেও সম্মত হয়েছে। এখন দেখা যাক, তাদের মুখের কথা ও কাজের মধ্যে কতোটুকু সঙ্গতি থাকে।

নির্যাতনের মুখে ১৯৭৮ সাল থেকেই রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এই বোঝা বাংলাদেশ কতোদিন বহন করবে বিষয়টি মিয়ানমারকেও বিবেচনা করতে হবে। প্রতিবেশী এ দেশটির সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশ সেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতেও আগ্রহী। মিয়ানমারকেও সেটি প্রমাণ করতে হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাক।