অন্যায় আবদারে সাড়া দিলে অন্যায়ের প্রবণতা বাড়ে

অনেক হয়েছে নয়-ছয়, আর না। এবার থেকেই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চুক্তিভিত্তিক আবাদ প্রকল্পের চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের সকল অনিয়ম দুর্নীতি দূর হোক। কর্মকর্তা আর কিছু অর্থশালীর যোগসাজসে বরাদ্দকৃত আবাদের অধিকাংশই খাতাকলমে আবাদ দেখানোর ভাওতাবাজি বন্ধ করা দরকার। এতে যেমন প্রকৃত ধান চাষিরা সরকার প্রদত্ত সুবিধাভোগ করতে পারবেন, তেমনই করপোরেশনের সরবরাহ করা প্রকৃত বীজের সত্যিকারের প্রদর্শনী খামারে উৎপাদিত ধান পাবে করপোরেশনের বীজ উৎপাদন বিভাগ। যার সুফল ভোগ করবে জাতি। ফলে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের অভ্যন্তরের সকল দুর্নীতি অনিয়ম দূর করা জাতির স্বার্থেই প্রয়োজন। অন্যথায় বাড়বে খেসারতের বোঝা।
অবশ্যই সরকারি কোনো দফতরের কর্মকর্তা সজাগ হলে অনিয়ম দুর্নীতি বাসা বাধার কথা নয়। তাছাড়া কোনো দফতরের অনিয়ম একদিনে ব্যাপকতা পায় না। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়ায় তখনই যখনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা কারণে অলসতা ও অস্বচ্ছতা পেয়ে বসে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চুক্তিভিত্তিক আবাদ প্রকল্পভুক্ত ১৪টি এলাকার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের দফতরটি দৌলাতদিয়াড়ে অবস্থিত। কন্ট্রাক্টগ্রোসের নিয়ম- বিএডিসির সরবরাহকৃত বীজ ও নির্দেশনা মোতাবেক প্রকৃত চাষিরা তাদের জমিতে আবাদ করবে। ওই ফসল থেকে করা হবে বীজ। উৎপাদিত ফসল শর্ত মোতাবেক তুলনামূলক চড়ামূল্যে কিনবে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রকৃত প্রান্তিক চাষিদের বদলে বড় দাগের জমির মালিক ও কিছু অর্থশালী ব্যবসায়ী চাষি সেজে চুক্তিভিত্তিক কৃষক হয়ে সুবিধা নিয়ে থাকেন। তাদের দেখানো জমির কিছু অংশে আবাদ হলেও অধিকাংশ আবাদই থাকে খাতা কলমে। ওরা বাজার থেকে ফসল কিনে করপোরেশনে সরবরাহ করে থাকেন। এ অভিযোগ বহুদিনের হলেও তাতে কর্ণপাত দূরের কথা কর্তাদের অনেকের মধ্যেই ঘটনা আড়াল করার পাঁয়তারাই পরিলক্ষিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তি আধিপত্য বিস্তার করে রাখার কারণে প্রকৃত বিষয়টি তেমন প্রকাশও পায়নি। সময়ের  স্রোতে কয়েকজনের আধিপত্যে ছেদ পড়েছে। বেড়েছে ভাগিদারের সংখ্যা। এতে গোপনীয়তাই শুধু ফাঁস হচ্ছে না, কর্মকর্তারা ওই কৃষক সেজে আধিপত্য বিস্তার করাদের কারোরই সন্তুষ্ট করতে না পেরে বেকায়দায় পড়েছেন। ফলে এবার বোরো ধানের আবাদ মুখথুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মধ্যে তিন সপ্তাহ আগেই বীজ সরবরাহ করার কথা, গতকাল বুধবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চাষিদের তালিকাই প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। অথচ বোরো ধানের আবাদের পাতু দেয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। বীজের জন্য যে আবাদ সেই আবাদ যদি নাবি বা আগাম হয় তা হলে তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সে হিসেবে এবার চরম অনিশ্চয়তায় বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনের ৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ। এ অনিশ্চয়তার জন্য অবশ্যই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়মই দায়ী।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক যখন সর্বক্ষেত্রেই নিয়মের সুবাতাসে সকলকে সিক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনের কিছু ব্যক্তির আধিপত্যে ছেদ এবং কৃষক সেজে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীভুক্ত চাষির চুক্তিবদ্ধ হওয়ার দাবির মধ্যদিয়ে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে অভ্যন্তরের নানা অনিয়ম। অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় দিলে অন্যায়ের প্রবণতা বাড়ে। তাছাড়া অন্যায় আবদারে যে কর্মকর্তারা সাড়া দেন তারা তো আর এমনি এমনি দেন না। সরকারি দায়িত্ব পালনে সরকারি নিয়ম নির্দেশনা না মানা মানেই অনিয়ম করা। বিগত দিনে অনিয়ম বা অন্যায় আবদারে সাড়া দেয়ার পরিণাম এবার নিশ্চয় কর্তাদের দায়িত্বশীল করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।