সঙ্কট নিরসনে জেলা প্রশাসকের সাথে বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনের উপ পরিচালকের সাক্ষাত : ভুয়া চাষির ভাওতাবাজি বন্ধে শক্ত অবস্থান

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রকৃত চাষিদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত

৩ ডিসেম্বর থেকে অঞ্চলভিত্তিক কৃষকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নির্ধারিত মূল্যে চাহিদার ৬০শতাংশ বোর ধানবীজ বিক্রি করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার: কাগজ কলমে চাষি সেজে বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোসের সুুবিধা নেয়া নেতাদের তাড়িয়ে প্রকৃত কৃষকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল করতে আগামী ৩ ডিসেম্বর থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে প্রকৃত চাষিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে বোরোধান বীজ নির্ধারিতমূল্যে বিতরণ করা হবে। একই সাথে লিপিবদ্ধ করা হবে ওই কৃষকের নাম ধাম। বীজসহ চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সুবিধা নিয়ে ধানের আবাদ তথা প্রদর্শনী খামারের পরবর্তিতে বাজার থেকে ধান কিনে বীজ বলে চড়া দামে বিক্রির সুযোগও এবার শক্তহাতে বন্ধ করা হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদের সাথে দেখা করার পর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চুয়াডাঙ্গা কন্ট্রাক্টগ্রোস জোনের উপ পরিচালক মোশেদুল ইসলাম উপরোক্ত তথ্য দিয়ে বলেছেন, কোনভাবেই কারো অন্যায় আবদারে সাড়া দেয়া হবে না। বীজ সরবরাহসহ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের নির্দেশনা মোতাবেক যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কোন প্রকারের নমনীয়তার সুযোগ নেই। হুমকি ধামকিরও পাত্তা দেয়া হবে না। অপরদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড়স্থ বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোস ও বীজগ্রহণ দফতরের সামনে সমাবেত কৃষকদের অনেকেই বিগত দিনের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, নেতাদের নামে ৫০ টাকা, অফিস খরচ হিসেবে ৪২ টাকা ও সাংবাদিকদের নামে ৩ টাকা করে মোট ৯৫ টাকা হারে বস্তাপ্রতি কেটে নেয়া গতবছরের ৫৭ লাখ টাকার হিসেব দিতে হবে। বলতে হবে কোন নেতাকে কতো টাকা দেয়া হয়েছে। অফিস খরচ বলতে কোন অফিসার কতো টাকা নিয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে। এতোদিনধরে লাখ লাখ টাকা নিয়ে অনিয়ম করার পর এবার এতো নিয়ম জারি করা হচ্ছে কেনো তাও ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। নতুন নতুন নেতাদের হুমকি ধামকির কারণে যথাসময়ে বীজ দেয়া বন্ধ করা হয়েছে কেনো তার স্পষ্ট জবাব কর্মকর্তাদের দিতে হবে।

জানা গেছে, বিএডিসি তথা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনে এবার ৫ হাজার ৮শ ১৭ একর জমিতে বোরধানের আবাদ করার কেন্দ্রীয় নিদের্শনা দেয়া হয়। অনুমোদন অনুপাতে ১০ নভেম্বরই চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাঝে নির্ধারিত মূল্যে বীজ সরবরাহ করার কথা। অথচ কিছু ব্যক্তি নিজেদের বড় বড় চাষি বলে দাবি করাসহ কিছু লোক দেখিয়ে শত শত একর জমিতে ধানের আবাদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। তাতে বাধ সেজে পূর্ব থেকেই আধিপত্য বিস্তার করা কৃষক এবং কৃষক সেজে সুবিধা নেয়া ব্যক্তিরাও পূর্বের মতো ভাগ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে উত্তেজনা দিন দিন বাড়তে থাকে। কর্মকর্তাদের হুমকি ধামকিও নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বোরোধানের আবাদের জন্য পাতু দেয়ার সময় পার হতে চললেও কন্ট্রাক্টগ্রোসের চাষিদের মাঝে বীজ সরবরাহ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে নানাভাবেই সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা চলতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে গতকাল উপ-পরিচারক মোর্শেদুল ইসলাম সহকর্মীদের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরে সহযোগিতার অনুরোধ জানান। আলোচনা করে কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, এখন থেকে কোনোভাবেই অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। প্রয়োজনে র‌্যাব, পুলিশ মোতায়েন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের উপস্থিতিতে প্রকৃত চাষিদের মধ্যে বীজ দেয়া দেয়া হবে। কেউ হটকারিতা সৃষ্টি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত: সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনের আগেই প্রশিক্ষণের জন্য চিনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন উপ পরিচালক (বীজ উৎপাদন) তাজুল ইসলাম ভুইয়া। তিনি সহকারী পরিচালক রেজওয়ানুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। গতপরশু একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কিছু কৃষক দাবিদার ব্যক্তি নামধাম প্রকাশ করলেও তাতে সাড়া না দেয়ায় গতকাল সকাল ১১টার দিকে তারা সমাবেত হয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি বিগত দিনে বস্তাপ্রতি কতোটাকা করে কেটে নেয়া হয়েছে তার ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রতিকার দাবি করেন।