সফল হোক কেরুজ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন

কেরুজ আখমাড়াই মরসুমের আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। আনুষ্ঠানিকতায় এবার তেমন ব্যাপকতা না থাকলেও খুব একটা কমতিও নেই। উদ্বোধনদিনে নিশ্চয় সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা চলতি মাড়াই মরসুম নির্বিঘেœর হোক, হোক লাভজনক। যদিও বাস্তবতার আলোকে দুটিই দূরাশা। তবুও আশা নিয়েই তো আমাদের চলতে হয়। আর সে কারণেই আশাহত হওয়ার কষ্টও আমাদের কখনো কখনো দুমড়ে মুচড়ে দেয়। যেমন ফি বছর মাড়াই মরসুমের এক পর্যায়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির নিজস্ব খামারভুক্ত জমিতে আবাদ করা আখে অগ্নিকা-ের ঘটনা এলাকাবাসীর জন্য তেমনই কষ্টের কারণ। অবশ্য কেরুজ কর্তাদের কারো কারো যুক্তি আখ কাটার জন্য দিনমজুরির খরচ কমাতে আখে আগুন দেয়ার পদ্ধতিটা খুব একটা মন্দ নয়। পক্ষান্তরে এ যুক্তিকে হাস্যকর বলে দাবি করে শ্রমিকদের কেউ কেউ বলেন, ওটা নরসুন্দরের কাছে গিয়ে চুল কাটানোর বদলে টাক করানোর মতোই খরচ বাঁচানো।
কেরুজ খামারের জমির আখের আবাদে অগ্নিকা-ের হিড়িক অন্যান্যবার মরসুমের মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে শুরু হলেও এবার মরসুম উদ্বোধনের একদিন আগেই গতপরশু চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নের ডিহি বাণিজ্যিক খামারের ৩০ বিঘা জমির আখে আগুন লাগে। অনেকেরই ধারণা আখের ক্ষেতে অগ্নিকা-ে ওই আখ কাটার কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারদেরই কাজ। অবশ্য ঠিকাদারদের তরফে তা কখনোই স্বীকার করা হয় না। তবে অভিন্ন ঘটনা যখন ঘুরে ফিরে ঘটতেই থাকে তখন বিষয়টি কর্তাদের কেউ কেউ সরাসরি অস্বীকারও করতে পারেন না। ফলে তখন লেবার খরচ কমাতে এটা একটা কৌশল বলে দাবি করা হয়। কর্তাদের কারো কারো এ দাবিকে যে যেভাবেই কটাক্ষ করুক না কেনো এলাকাবাসীর প্রত্যাশা কেরুজ চিনিকলটি চিরজীবী হোক। কেরুজ চিনিকলটি শুধু দর্শনার নয়, এলাকার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। মিলিটি আছে বলেই বহু পরিবারে রয়েছে স্বচ্ছলতার হাসি।
কেরুজ চিনিকলটির বুড়োটে কাটানোর কাজ সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা ব্যায়ে কাজ চলছে। অন্যান্যবার যেসব কারণে দফায় দফায় মিলের উৎপাদন থেমে যায়, সে কারণগুলো নিশ্চয় আগে ভাগেই ঠিক ঠাক করা হয়েছে। সে হিসেবে এবার অবশ্যই ঘন ঘন ব্রেক ডাউনের খবর পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে না। আর আখ মাড়াই করে চিনি আহরণেও শুরু থেকে কর্মকর্তারা নিশ্চয় সজাগ থাকবেন, আয়ের চেয়ে ব্যয় কমাতেও আন্তরিক হবেন কর্মচারী-শ্রমিকসহ পদস্থদের সকলে। অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটিকে টেকাতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কেরুজ চিনিকলের সুগার সেসের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেনের সঠিক নির্দেশনা নিশ্চয় এবার সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে। উদ্বোধনের শুভলগ্নে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আর আখের ক্ষেতে অগ্নিকা-ের বিষয়ে অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। দরকার প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে দোষি শনাক্ত করে উপযুক্তি শান্তি নিশ্চিত করা।