বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিল্প সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে

কেরুজ চিনিকলের ২০১৭-১৮ আখমাড়াই মরসুম উদ্বোধনকালে আলী আজগার টগর এমপি

হারুন রাজু/নজরুল ইসলাম: কেরুজ চিনিকলের ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ফি বছর লোকসান গুণলেও এবার লাভের আশা নিয়ে আখ মাড়াইয়ের যাত্রা শুরু করলো চিনিকল কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চিনিকলের ক্যান কেরিয়ার চত্বরে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের পরপরই ডোঙায় আখ নিক্ষেপের মধ্যদিয়ে মাড়াই যাত্রার উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য কেরুজ চিনিকল সুগার সেচ ডেভলপমেন্টের চেয়ারম্যান হাজি আলী আজগার টগর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনাকালে প্রধান অতিথি আলী আজগার টগর বলেন, চিনি শিল্পের মেরুদ- ভেঙে পড়ছিলো। চরম বিপর্যয়ের মুখে ছিলো দেশের চিনি শিল্প। এ বিপর্যয় থেকে চিনি শিল্পকে বাঁচাতে সরকার গ্রহণ করেছে নানামুখি পদক্ষেপ। রুগ্ন শিল্পকে রক্ষায় শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিদের সুবিধার্থে যে সাশ্রয় নীতিগ্রহণ করা হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ মিলের লোকসানের বোঝা কমাতে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আরো দক্ষ, কর্মঠ, দূরদর্শিতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। আখচাষিরাই মিলের প্রাণ। তাই আখচাষিদের সাথে শ্রমিক-কর্মচারিদেরকেও আখচাষ বাধ্যতামূলক করে আরও একধাপ এগিয়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে কেরুজ চিনিকলকে মডেল হিসেবে তুলে ধরা হবে গোটা দেশে। কেরুজ চিনিকলকে আধুনিকায়ন করতে ইতোমধ্যেই সাড়ে ৪৭ কোটি টাকার পরিবর্তে রিটেন্ডারের মাধ্যমে ১শ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছে সরকার। আ.লীগ সরকার গণ মানুষের সরকার। মেহনতি মানুষের সরকার। শ্রমিক-কর্মচারীদের সরকার। চাষিদের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যেই কয়েক দফায় আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আখচাষীদের ভোগান্তি লাঘবে আধুনিক পদ্ধতিতে মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে যেমন পূর্জি দেয়া হচ্ছে, তেমনি ঘরে বসেই আখের মূল্য পাচ্ছে কৃষকরা। যুগ যুগ ধরে চাষিকূল আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সমৃদ্ধ করেছে। কৃষিবান্ধব এ সরকার কৃষকের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হাতে নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় এসেছিলো তারা কখনো ভাবেনি এ দেশের কৃষকের কথা, ভাবেনি শ্রমিকের কথা, ভাবেনি দেশের মেহনতি মানুষের কথা। তারা দেশের সম্পদ নষ্ট করে নিজের আখের গুছিয়েছেন। তারাই দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছিলো। বন্ধ করে দিয়েছিলো দেশের অনেক শিল্প কলকারখানা। বেকার করেছিলো বহু শ্রমিক-কর্মচারীকে। তাই দেশের মানুষ ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার স্থপতি, বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সমৃদ্ধশীল সোনার বাংলাদেশ। সমৃদ্ধশীল সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন নিরলসভাবে। তাই দেশের উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখতে আবারো নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব, কেরুজ চিনিকলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, অ্যাড. নুরুল ইসলাম, কেরুজ চিনিকলের মহা-ব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, মহা-ব্যবস্থাপক (কৃষি) কেএম সরোয়ারদী, মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মহা-ব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারী) ফিদাহ হাসান বাদশা, মহা-ব্যবস্থাপক (কারখানা) আনোয়ার কবির, মনোয়ারুল ইসলাম, ডিজিএম শাহজ্জদ আলী, উত্তম কুমার কু-ু, হুমায়ুন কবির, আনোয়ার হোসেন, সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন, আকরাম হোসেন শিকদার, শাহদত হোসেন, আব্দুল ফাত্বাহ, বদরুল আলম, রাজিবুল হাসান, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী, সহ-সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, যুগ্ম-সম্পাদক খবির উদ্দিন, সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, শ্রমিক নেতা ফিরোজ আহমেদ সবুজ, মোস্তাফিজুর রহমান, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, আখচাষি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আ. হান্নান, সহ-সভাপতি ওমর আলী, কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, হাজি আকমত আলী প্রমুখ। গিয়াস উদ্দিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সভা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন কেরুজ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাজি আ. খালেক। পরে মিলের ডোঙায় আখ নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে কেরুজ চিনিকলের ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন করেন এমপি আলী আজগার টগরসহ অতিথিরা। এর আগে এমপি আলী আজগার টগরসহ অতিথিরা ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মরসুমে সর্বোচ্চ আখ চাষের স্মারক তুলে দেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের শৈলমারি গ্রামের বিশারত মোল্লা, জীবননগর খয়েরহুদার আহসান হাবীব ও মনোহারপুরের আব্দুর শুকুরের হাতে। এ মরসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশেনের বেধে দেয়া নির্ধারিত লক্ষমাত্রার মধ্যে রয়েছে ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৮শ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করতে হবে। ৭০ মাড়াই দিবসে চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে ধারণা করা হচ্ছে আখ মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে লক্ষমাত্রা অর্জন হলেও হতে পারে, সেক্ষেত্রে চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত। কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আহরণের গড় হার নির্ধারণের বিষয়টি। চলতি মরসুমে ৮০ বছরের পুরোনো মিলটি বড় ধরণের যান্ত্রিকত্রুটির কবলে না পড়লে লোকসানের অংক কমিয়ে আনতে পারে।