বিদ্যুত ঘাটতি পূরণ ও মর্যাদার হাতছানি

পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়- নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর বা পারমাণবিক চুল্লি বসানোর মাধ্যমে নতুন এক যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজের উদ্বোধন করেন। এরমধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনের উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এলিট ক্লাবে প্রবেশ করলো। বর্তমানে মাত্র ৩১ দেশ পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন তথা নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য। বাংলাদেশও সে তালিকায় যুক্ত হলো, এটি আনন্দের বিষয় অবশ্যই। কারণ এর সাথে এক ধরনের মর্যাদার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। তবে আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হলে জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ হওয়া। তীব্র বিদ্যুত ঘাটতির কারণে দেশের শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার এ সময়ে এটি একটি স্বস্তির খবর নিঃসন্দেহে।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদের এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প যেমন পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, তেমনি এটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সময় খেয়ে ফেলা প্রকল্পও। সেই পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালে বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবেলায় পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া এবং এ লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয় পাবনার রূপপুরে। তারপর নানা কারণে থমকে থাকা প্রকল্পটিতে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময়ের চাহিদা মোতাবেক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটিও থমকে যায়। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার মূল পর্যায় তথা চুল্লি স্থাপনের মধ্যদিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার প্রকল্পটি থেকে কাজ শুরু প্রায় ৬ বছর বা ৬৮ মাসের মাথায় বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বড় প্রকল্পে বড় ধরনের নয়-ছয় এবং সময়ক্ষেপণের ঘটনা আমাদের দেশে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র এরই মধ্যে আমাদের প্রায় ৫ যুগ সময় খেয়ে ফেলেছে। কাজেই এ প্রকল্পে নির্ধারিত সময়ের বাইরে কোনোভাবেই আর সময় বা অর্থের অপচয় হবে না এবং নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হবে, এমনটি প্রত্যাশা করা অত্যুক্তি হবে না মোটেই। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পটির প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন ২০২২ এবং দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ২০২৩ সালের নির্ধারিত সময়ে শুরুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকবেন এবং দেশবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নটি সঠিক সময়ে পূরণ হবে।
বিদ্যুত ঘাটতি ও কাক্সিক্ষত বিদ্যুত উৎপাদনের সঙ্কট কেবল আমাদের নয়, অনেক দেশের জন্যই এটি একটি বড় সমস্যা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে যেতে হলে এ সমস্যা যে কোনো মূল্যে সমাধান করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বেশি বেশি শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সবার আগে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনে যাওয়ার মধ্যদিয়ে সেদিকেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে বসানোর পাশাপাশি শিল্প-কারখানাসহ সবক্ষেত্রে বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে এমনটিই প্রত্যাশা।