অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অভ্যন্তরীণ কোন্দল না ঠিকাদারি পাওয়া না পাওয়ার জের

কেরুজ ডিহি বাণিজ্যিক খামারে পুড়ে যাওয়া আখ পরিদর্শনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

বেগমপুর প্রতিনিধি : কেরুজ ডিহি বাণিজ্যিক খামারে পুড়ে যাওয়া আখ পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টকারীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। প্রকৃত দোষিদের মুখোশ উন্মোচন করতে হলে প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা। তা না হলে পর্দার আড়ালে রয়ে যাবে দোষীরা। সঠিক তদন্তে প্রকৃত দোষীরা যাতে শাস্তি পায় এবং নির্দোশেরা যাতে মুক্তিপায় এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
গত বৃহস্পতিবার আখে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে কেরুজ চিনিকলের এ-ব্লকে। এতে করে ওই ব্লকের প্রায় ৩০ জমির আখ পুড়ে সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যায়। ঘটনার ৪ দিনের মাথায় গতকাল রোববার দুপুরের দিকে পুড়ে যাওয়া আখ দেখতে এবং কি কারণে বা কারা ঘটিয়েছে এ ঘটনা তা জানতে ঘটনাস্থলে যান চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম। এসময় তিনি ডিহি বাণিজ্যিক খামারের কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিক এবং ঠিকাদারের সাথে কথা বলেন। এসময় সকলের উদ্দেশে বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টকারী দেশের শত্রু। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করবে তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না। তাই প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করতে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজন সঠিক তথ্য উপাত্ত। আখে আগুন লাগার ঘটনা এমনি এমনি ঘটেনি। তাই তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর কেউ ঘটাতে সাহস না পায়। এদিকে পুড়ে যাওয়া আখ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেটে মাড়াই করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। গতকাল পর্যন্তও দেখাগেছে পুড়ে যাওয়া আখ মিলে আনা হচ্ছে। তাতে করে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবার আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনার পর থেকে আখে আগুন লাগার ব্যাপারে এলাকায় নানান কথা বাতাসে ভাসছে। অনেকেই মন্তব্য করে বলেছেন, আখ কাটার টেন্ডার নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে বিরোধ থাকে। কারণ প্রতিটি ঠিকাদারদের লেবার থাকে। আর লেবারগুলো থাকে বাণিজ্যিক খামারের আশপাশের গ্রামের লোকজন। নিজের পছন্দের ঠিকাদার কাজ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে লেবারদের মধ্যে থাকে দ্বন্দ্ব। এছাড়াও খামারের পাহারাদারদের সাথে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে নানা বিষয়ে থাকে মনোমালিন্য। এছাড়াও প্রতিটি বাণিজ্যিক খামারে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের পছন্দের লোক দিন হাজিরায় কাজ করে থাকে। তাই সেসব লেবাররা একে অপরকে ফাঁসাতেও শত্রুতা করে থাকে। তবে ঘটনা যাই ঘটুক না কেনো সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসুক এটা সকলের দাবি। এদিকে অগ্নিকা-ের ঘটনায় কেরুজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ওই খামারের ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেনকে কৈফিয়ততলব, সুপারভাইজার হারুন-অর-রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দিন হাজিরার শ্রমিক জাকির হোসেন এবং সরোয়ারকে কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এদিকে ঘটনার সময় ফার্ম ইনচার্জ ছিলেন ফার্মে, সুপারভাইজার ছিলেন এল-ব্লকে। খবর পেয়ে তারা তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রেণে আনার চেষ্টা করেন। তবে ফার্মের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
উল্লেখ্য, আখ কাটার মরসুম শুরু হলে চিনিকলের ৯টি বাণিজ্যিক খামারের কোথাও না কোথাও আখে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আর সেটা হয়ে থাকে চিনিকল চলাকালীন অবস্থায়। গত মরসুমে ৯টি বাণিজ্যিক খামারে অন্তত ২০-২২টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এটা পরিকল্পিত ছাড়া আর কিই-বা হতে পারে? ধারাবাহিক ঘটনাকে কোনোভাবেই দুর্ঘটনা হিসেবে এলাকাবাসী মানতে নারাজ।