বিলুপ্তপ্রায় গাজীরগান নতুন করে মাতিয়ে গেলো বাদেমাজু গ্রাম

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: পরামক্রমশালী আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গাজী-কালু ও চম্পাবতীর গান। নানা প্রতিকূলতার মাঝে এখনও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি উপজেলায় মাঝে মধ্যে দেখা মিললেও এতদাঞ্চলে গাজী গানের দেখা মেলা দুষ্কর। এ গানের দলে নারী অভিনেত্রী না থাকলেও নারী চরিত্রে পুরুষ অভিনয় করে দর্শকদের আকৃষ্ট করা হয়। তাদের অভিনয় দেখে কখনও দর্শক হাসে, আবার কখনও বা কেঁদে চোখের পানিতে বুক ভাসায়। বিশেষ করে নারীসমাজ। গ্রামীণ জনপদের বিশ্বাস-গ্রামের লোকজন বিপদ-আপদ, রোগমুক্তি ও মনোবাসনাপূর্ণ করার বাসনায় গাজীর গানের মানত করেন। নিয়ত সহি হলে তাদের বাসনাপূর্ণ হয় বলে বিশ্বাস করেন।
বিলুপ্ত ওই দলের দলনেতা মানোয়ার জানান, এলাকাব্যাপী গাজী-কালুর পালাগান একসময় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। আকাশ সংস্কৃতির যুগে এ গানের কদর গ্রামেও সাংঘাতিকভাবে কমে গেছে। গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম আল্ট্রা-মর্ডান। শহরের চেয়েও কয়েক ধাপ এগিয়ে। তাদের কাছে কালু গাজীর পালাগানের কদর কমে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে এই গাইনের দল। ফলে সকলেই দল বিলুপ্ত করতে বাধ্য হচ্ছেন। গাজী-কালুর গানের দলে নারী চরিত্রে পুরুষ অভিনয় করে। এটা গাজীর গানের নিয়ম। ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে এখানে নারীদের দিয়ে অভিনয় করানো নিষেধ। তার নিজের দলের শক্তিমান অভিনেতাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন পেশায় চলে গেছে। অনেকেই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে যদি গান গাওয়ায় ডাক পড়ে তবে সকল শিল্পীকে ডেকে ডেকে অনুরোধ করে নিয়ে যেতে হয়।
গতকাল ৬ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গার বাদেমাজু গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক আব্দুল খালেকের বাড়িতে গাজীর পালাগান অনুষ্ঠিত হয়। গড়গড়ি গ্রামের মানোয়ার হোসেনের দল ওই কালু গাজীর পালাগান আসর জমান। ওই গাজীর পালাগান দেখার জন্য আশপাশের কয়েক’শ নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে কৃষক আব্দুল খালেকের বাড়িতে।
আব্দুল খালেক বলেন, মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি গাজী কালুর পালাগানে অনুরাগী হয়ে উঠেন। সেই থেকে প্রতি বছর তার বাড়িতে কালুগাজীর পালাগানের আসর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ওই কালু গাজীর পালাগানের আসরে উপস্থিত ছিলেন দেশের খ্যাতিমান বংশীবাদক মনোয়ার হোসেন খোকন। তিনি বলেন, আর্থিক সঙ্কটের কারণে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে এ পালাগানের দল। অভিনেতা-অভিনেত্রী, বাঘ-ভাল্লুক, হাতির পোশাক কেনার টাকার অভাব হয় না। দিন দিন খরচ বাড়ছে তাই বায়নার টাকায় দল ঠিক রাখতে পারছেন না দল মালিক। গ্রামের গরিব লোকজন গাজী-কালুর গানের বেশি ভক্ত। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বে¡ও তারা বেশি টাকা দিতে পারে না। এ কারণে যারা অভিনয় করে তারা নিজের জন্য নয়, পরের জন্য প্রায় বিনে পয়সায় কাজ করে। ডিশ এন্টিনার দোর্দ- প্রতাপ ও আর্থিক সঙ্কটের কারণে বেশিরভাগ গাজী-কালুর গানের দল ইতমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
ছবিঃ গাজীর গান।