প্রশাসনে ১৬০ কর্মকর্তা হচ্ছেন অতিরিক্ত সচিব

সরকারি কর্মকর্তা অনেকের জন্য এটি বিজয় দিবসের উপহার

স্টাফ রিপোর্টার: প্রশাসনে দেড় শতাধিক কর্মকর্তাকে (যুগ্ম সচিব) অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত আদেশ জারির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, এটি আসন্ন বিজয় দিবসে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় উপহার। যেসব কর্মকর্তা অতীতে বঞ্চিত হয়েছেন এবার সেসব কর্মকর্তাকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র দাবি করেছে। নবম ব্যাচ পর্যন্ত অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে অন্তত ১০ দফা বৈঠক করে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) প্রথমে তিন স্তরে তথা সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব এবং যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার চিন্তাভাবনা করে। পরে সে চিন্তা বাদ দেয়া হয়। শুধুমাত্র অতিরিক্ত সচিব পদেই পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী অন্তত ১৭২ জনের নাম চূড়ান্ত করে এসএসবি। তবে এদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৭২ জনের নাম পাঠানোর সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করেও তা আর পাঠানো হয়নি। পরে আবারও এসএসবির বৈঠক বসে গতমাসে। ওই বৈঠকে কিছু নাম সংযোজন-বিয়োজন করে কমবেশি ১৬০ জনের নাম সংবলিত সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে আজ অথবা আগামী সপ্তাহে পদোন্নতির আদেশ জারি করা হবে। আর উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদের পদোন্নতি আগামী জানুয়ারিতে নতুন বছরের উপহার হিসেবে রেখে দেয়া হচ্ছে। শেষমেশ পদোন্নতি হলে এ ধাক্কায় বিদ্যমান প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠোমোয় আবারও বড়সড় ধাক্কা লাগবে। এমনিতেই অনেক আগেই পদের অধিক পদোন্নতি দিতে গিয়ে প্রশাসনের মধ্যমভাগ মোটা করে ফেলা হয়েছে। অবশ্য দীর্ঘদিনের পদোন্নতি জট খুলতে দফায় দফায় পদোন্নতি দিতে হয়েছে। এই পদোন্নতি হলে অতিরিক্ত সচিবের মঞ্জুরিকৃত ১০৭ পদের বিপরীতে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৮২ জনে। অপরদিকে ৪৩০টি যুগ্ম সচিব পদে এখন কর্মকর্তার সংখ্যা ১ হাজার ১৫২ জন এবং উপসচিবের ৮৩০ পদের বিপরীতে কর্মকর্তা হলেন ২ হাজার ১২৭ জন।

জানা গেছে, সর্বশেষ অতিরিক্ত সচিব পদে (৮৬ ব্যাচসহ) ১৪৯ জন, যুগ্ম সচিব পদে (১১তম ব্যাচসহ) ১৯৩ জন এবং উপসচিব পদে (একুশতম ব্যাচসহ) ২২৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর আগে পদোন্নতি হয়েছিল এ বছরের ১৫ মে। তখন অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৭ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৬৯ জন এবং উপসচিব পদে ৬৪ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদের তুলনায় অস্বাভাবিক সংখ্যায় কর্মকর্তার পদোন্নতি দেয়ায় প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠমোয় বড় চাপ তৈরি হচ্ছে। তারা বলছেন, পদোন্নতি প্রাপ্তদের সামজিক মর্যাদা বাড়বে, কিছু আর্থিক সুবিধাও বাড়বে বটে। কিন্তু তাদের প্রায় সকলকেই অধ:স্তন পদে থেকেই কাজ করতে হবে। কারণ, এর আগের দফায় পদোন্নতি প্রাপ্তরাই এখনো বসার জায়গা পাননি। বেশিরভাগই এখনও পদোন্নতিপূর্ব পদেই কাজ করছেন। যিনি অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন তিনি কাজ করছেন যুগ্ম সচিবের, যুগ্ম সচিব কাজ করছেন উপসচিবের আর উপসচিব কাজ করছেন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব তথা ডেস্ক অফিসারের পদে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রশাসনে পদ ভেদে দুই, তিন ও চার বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ও সমগ্র চাকরিজীবনের কর্মদক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে পদোন্নতি বিবেচনা করার কথা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ না থাকার পরও পদোন্নতি দেয়ার রেওয়াজ অনেকদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত কাজ। কারণ রাষ্ট্রীয় বেতন-ভাতা দেয়া হয় পদের বিপরীতে। এখন একজন কর্মকর্তা পদ না পেয়েও বেতন-ভাতা নেবেন এটি বিধি-বিধান বহির্ভূত। তবে আইন অনুযায়ী মূল পদে চাকরির মোট সময় অতিক্রান্ত হলেই একজন কর্মকর্তার (অন্যান্য যোগ্যতা সাপেক্ষে) পদোন্নতি দেয়ায় উচিত। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখার ফলে এখন পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ফলে এখন পদোন্নতি দেয়াটাই জরুরি। তবে সময়ের প্রয়োজনে এখন জরুরিভাবে প্রশাসনিক কাঠামোয় সংস্কার আনা দরকার। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, দফতর, অধিদফতর ও সংস্থায় কোথায় কী ধরণের পদে কত জনবল প্রয়োজন সেটি ঠিক করা দরকার। তা না হলে পদোন্নতিযোগ্য সব কর্মকর্তার সময়মতো পদোন্নতি যেমন দেয়া সম্ভব হয় না-তেমনি পদোন্নতি দেয়ার পর পোস্টিং দেয়াও সম্ভব হয় না।