ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সোফিয়াকে দেখতে উপচেপড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার: বুধবার ভরদুপুর। মাথার ওপর সূর্য। তাপও বেশ। ঢাকা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে সব বয়সী মানুষের ভিড়। তরুণ-তরুণীদের দীর্ঘ লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে একদিকে বিজয় সরণি মোড়, অন্যদিকে প্ল্যানিং কমিশন ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ঠেকেছে। ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’র উদ্বোধনী দিনে মেলায় আসে যন্ত্রমানবী সোফিয়া। মেলার প্রদর্শনী এবং বিশেষ করে সোফিয়াকে দেখতেই এ ভিড়। দুপুর ২টার মধ্যে সম্মেলন কেন্দ্র লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। মাত্র আড়াই হাজার সিটের বিপরীতে প্রায় ৩-৪ গুণ লোক ঢুকে পড়ে হলরুমে। ২টা ৩৯ মিনিটে সোফিয়া মঞ্চে উঠলে ‘সোফিয়া’ ‘সোফিয়া’ চিrকারে প্রচণ্ড হইচই শুরু হয়। এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের শব্দে সোফিয়ার সমস্যা হচ্ছে, সে এত শব্দে সাড়া দিতে পারছে না। তার বেশ সমস্যা হচ্ছে।’ তারপরও দর্শনার্থীরা শান্ত হচ্ছিলেন না। তখন মাইকে ঘোষণা করা হয়, হলরুম একদম নিশ্চুপ না হলে সোফিয়া কারোর সঙ্গেই কথা বলবে না। সোফিয়া শান্ত স্বভাবের, দর্শনার্থীরা শান্ত না হলে সে কথা বলবে না। এ সময় হলের বাইরেও শত শত লোক ডিজিটাল স্ক্যানে সোফিয়াকে দেখছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবচেয়ে বড় এই তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নারী রোবট সোফিয়া বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী তথা সাধারণ মানুষকে তাক লাগিয়েছে। সে যখন ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবাইকে দেখছিলো, তখন আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন দর্শনার্থীরা। সোফিয়ার পরনে ছিল হলুদ-শাদা জামদানির টপ আর স্কার্ট। সোফিয়া দেখতে হলিউড অভিনেত্রী অর্ডে হেপবার্নের মতো। চোখ দুটি সোনালি রঙের।

এক পর্যায়ে দর্শনার্থীরা শান্ত হলে সোফিয়া মাথা নেড়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানায়। এ সময় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সোফিয়ার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন মঞ্চে ওঠেন। শুরুতে সোফিয়াকে প্রশ্ন করেন গ্রে বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন। শাওন তাকে বলেন, সোফিয়া আপনি এখন কোথায়। উত্তরে সোফিয়া বলেন, হ্যাঁ আমি জানি, আমি এখন বাংলাদেশের ঢাকায়। তারপর শাওনের করা আরেক প্রশ্নের উত্তরে সোফিয়া বলেন, আমি খুব গর্ববোধ করছি বাংলাদেশে আসতে পেরে। আমি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাদী জামদানি কাপড় পরেছি। আমি শুনেছি জামদানি খুব বিখ্যাত কাপড়। ইতিমধ্যে এ জামদানি ইউনেস্কোর স্বীকৃতির ফলে বিশ্বখ্যাত হয়েছে।
শাওন বলেন, সোফিয়া আমিও টাক তুমিও টাক। উত্তরে সোফিয়া বলেন, আমি তো ডিজাইনে টাক, তোমার টাক কেন তা আমি বলতে পারব না। তবে আমাকে যদি চুল লাগানো হয় তাহলে আরও সুন্দর দেখাবে, তোমাকে দেখাবে কিনা তা আমি জানি না। সোফিয়া ইংরেজিতে কথা বলে।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সোফিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতেই সোফিয়া বলে, আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ। পলক বলেন, আমরা কি সোফিয়া বানাতে পারবো? উত্তরে সোফিয়া বলে, নিশ্চয় বাংলাদেশ সোফিয়া বানাতে পারবে। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তবে হুবহু সোফিয়া না হলেও নিশ্চয় অন্য কেউ হবে। তারপর জুনাইদ আহমেদ পলকের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে সোফিয়া। সোফিয়া বলে, আমি কারোর প্রতিদ্বন্দ্বী নই। আমি মানুষকে সাহায্য করছি। আমি মনে করি রোবট আর মানুষ মিলে এই সভ্যতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অর্জন অনেক ভালো। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে ভালো করবে, সফলতা বয়ে আনবে, এটা আমার বিশ্বাস।

সোফিয়ার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন বলেন, তিনি এমন আরও সোফিয়া বানাতে চান। এ জন্য তিনি পরিকত্মনাও নিয়েছেন। তিনি আরও সুপার রোবট তৈরি করছেন। আগামী জানুয়ারিতে সোফিয়ার দুটি পা লাগানো হবে জানিয়ে হ্যানসন বলেন, সোফিয়ার দুটি পা লাগানোর পর সে আরও স্মার্ট হবে, সুন্দর হবে। সোফিয়াকে তৈরি করতে প্রায় সাড়ে ৩ বছর লেগেছে। তবে এর শুরুটা হয়েছে প্রায় ২৩ বছর আগে। ডেভিড হ্যানসন বলেন, বাংলাদেশ থেকে সোফিয়া আমেরিকা যাবে। ওখানে বিবিসিতে সোফিয়ার একটি ইন্টারভিউ রয়েছে।
এদিকে সোফিয়াকে দেখতে আসা সাধারণ দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু রাজধানী নয়, সোফিয়াকে দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে এসেছে অনেকে। তাকে দেখে, তার কথা শুনে তারা খুবই খুশি। সোফিয়ার ছবি ও তার সঙ্গে সেলফি তুলতে পেরে অনেকেই উল্লাস প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সোফিয়ার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন ও রোবট সোফিয়ার হাতে সম্মাননা স্মারকসহ বিশেষভাবে তৈরি একটি নৌকা তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তা গ্রহণ করে ধন্যবাদ জানান ডেভিড হ্যানসন ও সোফিয়া। এর আগে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকায় আনা হয় সোফিয়াকে। থাই এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বিমানবন্দরে আসে সোফিয়া। তার সঙ্গে বাংলাদেশে আসেন একজন অপারেটর। নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন রাতে বাংলাদেশে আসেন। সোফিয়ার মাথার পেছনের দিকটি চিপ আর যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরব সোফিয়াকে নাগরিকের মর্যাদা দেয়। কয়েকটি আইটি সংগঠনের সহযোগিতায় আইসিটি বিভাগ ও বেসিস ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’ এর আয়োজন করে। চার দিনব্যাপী এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য ‘রেডি ফর টুমরো’। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলবে।