মৃত্যুভয়ে ভীরুতা নয় : সময়ের মূল্যায়নই মানুষকে মহৎ করে

আজকের দিনটা আগামীকালের জন্য কাজে লাগানোটাই বুদ্ধিমত্তা। তাই বলে মৃত্যুকে সবসময় মনে রাখার জন্য ঘরের মধ্যে কবর আগাম খুড়ে রাখা নিশ্চয় সুচিন্তার বহির্প্রকাশ নয়। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার আরামডাঙ্গা গ্রামের কবিরাজ নজরুল ফকিরের ঘরের মধ্যে কবর খুড়েছেন যতোটা মৃত্যুকে মনে রাখা, তার চেয়ে বেশি বিশেষ মতবাদকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করা। আখেরে দুটি লাভ স্পষ্ট। এক, জীবিতকালে আস্তানায় কবিরাজি বাণিজ্যে রমরমা, দুই-মৃত্যুর পর সেখানে দরগা নামে দোকানে রূপান্তর হওয়া।
না, মানুষ এখন আর সেই আগের মতো অতোটা হুঁচুকে নেই। নেই অতোটা সরল সোজা বা বোকা। যতোটা সরলসোজা থাকলে অন্ধ বিশ্বাসে সর্বস্ব হারায়। তা না হলে হরহামেশায় হরেক নামে আস্তানা খুঁলে প্রতারণামূলক বাণিজ্যে এতোটা খরা পরীলক্ষিত হতো না। যদিও এখনও কিছু আস্তানার অনুসারীদের মধ্যে আন্দাজেই আমদে মাতার হিড়িক রয়েছে। তারপরও অধিকাংশের মাঝে যে সচেতনতার আলো জেগেছে তা নিয়ে নিশ্চয় সন্দেহ নেই। কুসংস্কারাচ্ছন্নতার অন্ধকার তাড়াতে সচেতনতার আলোর ঔজ্জ্বল্য অবশ্যই গুড়িয়ে দিয়েছে বহু ভ-ের ভাউতাবাজির দোকান। দৈনিক মাথাভাঙ্গা হয়েছে সহায়ক। মনগড়া গল্পে মতলববাজদের অনেকেই আজগুবি সব আস্তানা গড়ে তোলে। মিথ্যা প্রচার প্রচারণায় পড়ে কিছু মানুষ প্রতারিত হয়। তবে প্রতারণার পুরাতন আস্তানার কিছুটা স্থায়ীত্ব দেখা গেলেও নতুন আস্তানার স্থায়ীত্ব নিতান্তই সাময়িক। কারণ, সমাজে সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে দ্রুত। যে আলো শুধু ভ-দের ভ-ামিই নাশ করে না, ধর্মের সঠিক অনুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। কোন ধর্মেই মৃত্যুকে অস্বীকার করে না। অবশ্যই মানুষ মরণশীল। জন্মেছো যখন মরতে তখন হবেই। চিরন্তন এ সত্য নিয়ে বাণিজ্যের বদলে জীবনটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারাটাই স্বার্থকতা। মরতে হবে বলে সব কিছু বাদ দিয়ে ধ্যান কিম্বা উপাসনার নির্দেশনা কোনো ধর্মেই কি দিয়েছে? তবে সকল ধর্মেই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৃত্যুকে মনে রাখার পুনঃপুন তাগিদ দিয়েছে। যে তাগিদ উপলব্ধি করে সময় অপচয় রুখতে পারলেই এহকাল-পরকাল কিম্বা এজনম সেজনম নিয়ে যে দুশ্চিন্তা থাকে না তা বোদ্ধাদের নিশ্চয় নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। মৃত্যুভয়ে ভীরুতা নয়, মৃত্যুভয়ে সময়ের মূল্যায়নই মানুষকে মহত করে তোলে। তাই বলে মৃত্যুর কথা মনে রাখার জন্য ঘরের মধ্যে কবর খুড়ার দরকার হয় না। দরকার জীবনের প্রতি যতœবান হওয়া, ধরিত্রীর জন্য ভালো কিছু করে যাওয়া।
ভালো-মন্দের তফাৎটা সকলে সমানভাবে বুঝতে না পারলেও সমাজের কারো কারো কলা-কৌশল নিয়ে নিজের মধ্যে প্রশ্ন তোলাটাও নিশ্চয় কম নয়। এই প্রশ্নই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এক দম্পতি তার শোবার ঘরে স্বামী-স্ত্রীর কবর খুড়ে রেখেছেন। কে কবে মরবেন তার কোনো ঠিক নেই, কবর খুড়ে রেখে নিজেদের একটু অন্যরকমভাবে উপস্থাপনের আড়ালে কিছু একটা যে আছে তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু কেনো? এ প্রশ্নের জবাবই খুলবে ওই মতলববাজের মুখোশ।