ভালো কাজে সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান : খারাপ কাজের সমালোচনা করুন

বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসব সাংবাদিকদের মিলনমেলায় পরিণত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, চুয়াডাঙ্গায় হাতেগোনা কয়েকজন বাদে বেশিরভাগ সাংবাদিকই পজেটিভ সাংবাদিকতা করেন। সাংবাদিকতার এই ধারা ধরে রাখতে হবে। চুয়াডাঙ্গার অনেক সম্ভাবনা আছে। আমরা প্রশাসনে যারা আছি চুয়াডাঙ্গার জন্য কাজ করতে চাই। আমাদের ভালো কাজে সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান এবং খারাপ কাজের সমালোচনা করেন। গতকাল রোববার রাতে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এসব বলেন।
শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে উৎসব শুরু হয়। প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। বায়তুল মামুর মসজিদের ইমাম জাহিদ হাসানের কোরআন তেলওয়াতের পর সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের আলোচনা শুরু হয়। এরপর অতিথিদেরকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করা হয়। সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া, স্মারক হিসেবে প্রত্যেকের জন্য গেঞ্জি ও ক্যাপ দেয়া হয়। সর্বশেষ নৈশভোজের মধ্যদিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
সূবর্ণ জয়ন্তীর এই উৎসবে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুরের সভাপতি আলহাজ সাহিদুজ্জামান টরিক ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বর্ষীয়ান সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘একটি সংগঠন ৫০ বছর টিকে থাকাও অর্জন।’ বিগত সময়ের সাংবাদিকতার প্রসঙ্গ টেনে জেলা প্রশাসক বলেন, এক সময় সাংবাদিক দেখলে অনেকেই ঝামেলা মনে করতেন। এখন সেরকম অবস্থা থেকে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। এখন চলছে পজিটিভ সাংবাদিকতা। চুয়াডাঙ্গার ভালোর জন্য পজিটিভ সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শেখ সেলিম এবং বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদকে জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক হিসেবে মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, আজ চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের সাতমাস পূর্ণ হলো। এখনও জনপ্রিয় হওয়ার সময় হয়নি। তবে, সকলের সহযোগিতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়েছে। যার একটি একঘণ্টায় সাড়ে সাতলাখ বৃক্ষরোপণ আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম, অপরটি ফুটবলের হাজারো দর্শককে আবারও মাঠে ফিরিয়ে আনার ঘটনা দেশে প্রথম। এসব ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছেন সাংবাদিকরা। চুয়াডাঙ্গার ফুটবলের খবর সাংবাদিকরা সঠিকভাবে উপস্থাপন করায় তা আজ সারাদেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া দাফতরিককাজে ই-ফাইলিঙে সারাদেশে প্রথম হয়েছে চুয়াডাঙ্গা। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান, অল্পতে নিজেকে বিকিয়ে না দিয়ে সাংবাদিকতার মূল সুর নিয়ে এগিয়ে যাবেন, সেটাই প্রত্যাশা।
পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন-১ কবিতা থেকে ‘কি করছো? ছবি আঁকছি। -ওটা তো একটা বিন্দু। তুমি ছুঁয়ে দিলেই বৃত্ত হবে।’ এই লাইন ক’টি আবৃত্তি করে পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনে তিনটি নিয়ামক হচ্ছে সাংবাদিক, প্রশাসন ও ব্যবসায়ী। সমাজের বেশিরভাগ বিন্দু, বিন্দুতেই থেকে যায়। সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের প্রয়াসে তা বৃত্ত হবে। আমি চাই, জেলাটি সত্যিকার অর্থেই মাদকমুক্ত হোক। জেলা প্রশাসক আমাকে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করছেন। আমি মানুষের ভেতরের অনুভূতি অনুধাবন করতে পেরেছি। সবাইকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গাকে শান্তির নীড় করতে চাই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখেছি ব্যক্তির পক্ষে লিখলে সাংবাদিকরা থ্যাংকস পান এবং জনগণের পক্ষে লিখলে বা কারো বিপক্ষে গেলে ঝামেলা পোয়াতে হয়। সত্য খবর লিখতে গিয়ে এখানকার সাংবাদিকরা রক্তাক্ত হয়েছেন। প্রেসক্লাবে হামলা করা হয়েছে। আমি পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গাকে শান্তির শহরে পরিণত করেছি। আমরা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন চুয়াডাঙ্গা দেখতে চাই। নতুন উদ্যমে চুয়াডাঙ্গাকে সাজাতে চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আজাদ মালিতা বলেন, প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের বৈঠকখানা আর দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি।
বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুরের সভাপতি আলহাজ সাহিদুজ্জামান টরিক বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সমাজকে কিভাবে চেঞ্জ করছেন, কিভাবে গুরুত্ব বহন করেন, আপনারা নিজেরাই জানেন না। সাহসিকতার সাথে সঠিক সংবাদ লিখবেন। সাচ্চা মানুষ হলে ভয় করবেন না। আমি কখনো ভোট করবো না, রাজনীতিও করবো না। আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২৮টি রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে এলাকায়। চুয়াডাঙ্গায় যেকোনো ভালো কাজে আমি আছি। আপনারা ডিসি এসপিকে সাপোর্ট করবেন।’
বিশেষ অতিথি এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আজকের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসব যেন সাংবাদিকদের বিজয় মেলা। বিজয় উৎসব হচ্ছে আজ। সাংবাদিকতা মহান পেশা। এই পেশার সাথে জড়িতরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি মো. তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম উদ্দিন খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, স্থানীয় সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন সরদার আল আমিন, অ্যাডভোকেট তছিরুল আলম মালিক ডিউক, নাজমুল হক স্বপন, রুহুল আমিন রতন, আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রাজীব হাসান কচি ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ফাইজার চৌধুরী।