প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত যাবে

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি দেশের উন্নয়নে বিদ্যুত অপরিহার্য। আমাদের লক্ষ্য শুধু শহরেই নয়, গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দেওয়া। এ জন্য সরকার বিদ্যুত উৎপাদনে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছে। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র এবং ১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। একই সময় ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোরে নির্মিত ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি’ পার্কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখলাম বিদ্যুতের রিজার্ভের পরিমাণ ১৫/১৬শ মেগাওয়াট মাত্র। তখন রাজধানীর অনেক এলাকাও ছিলো অন্ধকারে। আমরা ক্ষমতায় এসে বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্র করার সুযোগ করে দিলাম, যাতে রিজার্ভের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আমরা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত নিয়ে যাত্রা করেছিলাম, এখন ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছি। আশা করি দেশের মানুষ তা মনে রাখবে। বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন,  লুটপাট, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, ঘুষ, অত্যাচার, নির্যাতন ছিল বিএনপির কাজ।

তাদের কাছে ক্ষমতা মানেই ভোগবিলাসে গা ভাসানো। ক্ষমতায় থাকতে তারা দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল। জঙ্গিবাদ ও বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, আমার ওপর গ্রেনেড হামলাই ছিল তাদের কাজ। মানুষের উন্নয়নে তারা কোনো কাজ করেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন সোলার-পাওয়ার প্লান্ট করছি, তেমনি পরমাণু ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রও করছি। তেলভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন করছি আবার ভারত থেকেও বিদ্যুত কিনে নিয়ে আসছি। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুত পাচ্ছে এবং আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া। সব থেকে আনন্দের বিষয়— জাতীয় গ্রিডে সোলার বিদ্যুত আজ থেকে যোগ হচ্ছে। যদিও এটা খুব ব্যয়বহুল। তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তি যখন এসে গেছে তাই আমরা এটা ব্যবহার করতে শুরু করেছি। কাজেই আমাদের দুর্গম সব এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ৪৫ লাখ সোলার প্যানেল ইতিমধ্যে বিদ্যুত উৎপাদনে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় এসে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিলো ঘরে ঘরে আলো জ্বালাব, মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করব। প্রতিটি অঞ্চল উন্নত করব এবং সুষম বণ্টন নিশ্চিত করব। আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিদ্যুত ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিদ্যুত উৎপাদনে যে ব্যয় হয় তারচেয়ে অনেক কম দামে আমরা বিদ্যুত দিচ্ছি। তাই সবাইকে এই বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।   উদ্বোধনকৃত চারটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে— শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকল পাওয়ার প্লান্ট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, শাল্লা ৪০০ কিলোওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট এবং সরিষাবাড়ী ৩ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট। শতভাগ বিদ্যুতায়িত ১০টি উপজেলা হচ্ছে ফরিদপুর সদর, রাজৈর, নওগাঁ সদর, কামারখন্দ, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, শালিখা, মেহেরপুর সদর, মদন ও বেলাবো। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম মুতাইরি, কুয়েতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আল হায়াৎ এবং সৌদি এক্সপোর্টের প্রোগ্রাম ও সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র কর্মকর্তারা এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যুত বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুত খাতের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের সুফল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছে দিতে যশোরে যাত্রা শুরু হলো ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি’ পার্কের। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ পার্কের উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সফটওয়্যার পার্কে বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে; পাশাপাশি আমাদের দেশকে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তোলার একটা ধাপ অতিক্রম করতে পারলাম। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো মনে করি এটা আমাদের রপ্তানিতে সব থেকে বড় অবদান রাখতে পারবে। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকাকে সুনির্দিষ্ট করেই তৈরি করতে চাচ্ছি এবং সে কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। সফটওয়্যার তৈরি, কল সেন্টার সেবা, ফ্রিল্যান্সিং, গবেষণা ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ হবে এই পার্কে। সেখানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পাঁচ হাজার তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে সরকার আশা করছে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ জেলায় বিশ্বমানের একটি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার চার বছরের মাথায় ২০১৪ সালের এপ্রিলে বেজপাড়া শংকরপুর এলাকায় ২ লাখ ৩২ হাজার বর্গফুট জমির ওপর ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি’ পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৫ তলার মূল ভবনের পাশাপাশি তিন তারকা মানের একটি ১২তলা ডরমেটরি ভবন রয়েছে। জাপানি উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডরমেটরি ভবনের ১১তলায় তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের একটি জিম। সেই সঙ্গে রয়েছে আধুনিক কনভেনশন সেন্টার ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। বিদ্যুত চাহিদা মেটাতে করা হয়েছে ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন। ইতিমধ্যে জাপানের দুটি কোম্পানিসহ ৫৫টি কোম্পানিকে পার্কে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্টার্টআপ কোম্পানি হিসেবে তরুণদের বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে পুরো একটি ফ্লোর। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানি আয় ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য পূরণে এই পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে। অন্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।