একাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিএনপি

আগামী তিন মাস শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচী খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বৈঠকে উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার: আরও তিন মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করবে বিএনপি। সে হিসেবেই সাজানো হচ্ছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘুঁটি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারো স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত্ম সিদ্ধান্ত নিবে দলটি।  আগামী নির্বাচনের করণীয় ঠিক করতে গত রোববার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকের বড় অংশজুড়েই ছিলো নির্বাচন যাওয়া নিয়ে নানামুখী ভাবনা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘সাজা’ দিয়ে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী করণীয় হবে তা নিয়েও মতামত আসে বৈঠকে। অনুকূল পরিবেশ না থাকলে বিএনপি কোনো উপায়ে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে বাধ্য করবে এমন মতও দেন একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েই এগুচ্ছে বিএনপি। সরকার যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি না করে তাহলে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে আগামী তিন মাস দেশব্যাপী নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে জনমত তৈরি করবে বিএনপি। এরপর সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে দাবির পক্ষে দেশীয়ও আন্ত্মর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হবে। সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি না করলে এরপর বেগম খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ডাক দেবেন। ওই সময় আন্দোলনের কৌশল কী হবে তা নিয়েও সিনিয়র নেতাদের মতামত নেন।

স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার ভবিষ্যত নিয়েও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মতামত তুলে ধরেন। এরপর একই বিষয়ে দলের সিনিয়র আইনজীবী নেতাদের মতামতও নেন বিএনপি প্রধান। সবারই বক্তব্যেই মামলায় সাজা হতে পারে এমন শঙ্কার কথাই জানানো হয়। এক আইনজীবী নেতা বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচার শেষপর্যায়ে। বেগম জিয়া এখন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখছেন। যুক্তিতর্কের পরই রায়। রায়ে নিম্ন আদালতে সাজা হলেও উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কথাও বেগম জিয়াকে জানান আইনজীবী নেতারা। তবে সরকার কোনো আইন করে নিম্ন আদালতের সাজা হলে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে কি না এ নিয়েও শঙ্কার কথা বলা হয় বৈঠকে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, স্থায়ী কমিটির সভা অত্যন্ত্ম উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পন্ন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তার বিরম্নদ্ধে দায়ের করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচার করে বিনিয়োগের মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ হবে বলে জানানো হয়। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব দলকে সমান সুযোগ প্রদান এবং নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে মোতায়েন করার দাবি জানায় স্থায়ী কমিটি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার জানান, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে চায়। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। সরকার এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কমিটি গঠনের কথা জানান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। কমিটির সদস্যরা হলেন- রংপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল খালেক। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত রংপুর জেলা ও মহানগর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুডিগ্রাম, সৈয়দপুর, নীলফামারী সভাপতিরা পদাধিকার বলে এই কমিটির সদস্য হবে।