পরম গৌরবের মহান বিজয় দিবস আজ

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। আমাদের জন্য দিনটি যুগপৎ অনির্বচনীয় আনন্দ ও বেদনার বার্তা বয়ে আনে। দীর্ঘ নয় মাসের রুদ্ধশ্বাস অমানিশার অন্ধকার বিদীর্ণ করে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বিজয়ের যে-সূর্য উদীত হয়, তার পরতে পরতে জড়িয়ে অজস্র স্বজনহারা মানুষের হৃদয় নিংড়ানো অশ্রু।
স্বাধীনতা অর্জনের এতো বছর পরও সঙ্গত প্রশ্ন- যার জন্য এতো আত্মত্যাগ সেই লক্ষ্য কি অর্জিত হয়েছে? অনেকেই হয়তো বলবেন, স্বাধীনতার চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে! আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশ সম্পূর্ণভাবে বিদেশি হানাদারমুক্ত হয়েছে। নিজস্ব পতাকা ও পাসপোর্ট পেয়েছি। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে আমরা বলতে পারি, আমরা বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। এমন ভাগ্যই-বা ক’জনের হয়? তারপরও যে থেকে যায় তা অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। কারণ বিজয় বা স্বাধীনতা যাই বলি না কেন, তার সুফল যদি জনগণের নিকট দৃশ্যমান করে তোলা না যায় এবং সেই আলোতে তারা যদি নিজেদের আলোকিত ভাবতে না পারে তাহলে পূর্ণিমার চাঁদও ঝলসানো রুটিতে মতোই হবে নাকি?
৪৬ বছর আগে যে-বিজয় আমরা অর্জন করেছি, তা শুধু যে জাতির সামনে সম্ভাবনার অশেষ দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে তাই নয়, একই সাথে বদলে দিয়েছে আমাদের সামগ্রিক জীবনচিত্রও। সমাজ ও অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে স্বাধীনতার জাদুর কাঠির পরশ। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজির বেশির ভাগ সূচকেই তাক-লাগানো সাফল্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। বংশানুক্রমিক দারিদ্র্যই কেবল পিছু হটেনি, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নও এখন আর শুধু কল্পনা নয়। এরপারও বলতে হয়, বিজয়ের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়াই যদি আমাদের মূল অঙ্গীকার হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবে এখনো অনেক পথ বাকি।
বিজয় দিবস অনিবার্যভাবে আমাদের বিজয়ের বেদিমূলে আত্মসর্গকারী সেইসব বীর বঙ্গসন্তানদের কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে করে দেয় এই বিজয়ের মূল রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। বিজয়ের এইদিনে আমরা গর্বভরে তাদের স্মরণ করি এবং গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাই সকল শহীদের শোকাহত স্বজনদের প্রতি।