মন্দের দাপট বাড়লে ভালো থাকতে ভালোরা উৎসাহ হারায়

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটির পরিবেশ সুন্দর করার জন্য যখন নানামুখি উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে, যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম ও দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, যখন উচ্ছৃঙ্খলা রোধে ও দালালমুক্ত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে পুলিশ মোতায়েনসহ মাঝে মাঝেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে তখন স্বেচ্ছাসেবকের স্বেচ্ছাচারিতার খবর চমকে ওঠার মতোই। যদিও জনপ্রতি ২০ টাকা, তবু সারা দিনে আদায়ের পরিমাণ কম হয় না। ঘটনাটি জানাজানি হলে সঙ্গত কিছু প্রশ্ন সামনে আসে, অবৈধভাবে রোগীর ছাড়পত্র দেয়ার সময় টাকা নেয়ার সাহস ওই স্বেচ্ছাসেবক পেলো কীভাবে? বিষয়টি জানার পরও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগই বা রয়েছে কীভাবে? লোকবলের অপ্রতুলতার কারণেই সরকারি চিকিৎসা সেবাদান কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবীদের কাজ করার সুযোগই শুধু দিতে হয়নি, ক্ষেত্রবিশেষ ওদের আদরও করতে হয়। তাতেই কেউ কেউ অর্থলিপ্সু হয়ে ওঠে। এতে অন্যদের তথা যারা সততার সাথে আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজ করেন তাদের মর্যাদার ওপর কলঙ্কের ছাপ পড়ে। মন্দের দাপট বাড়লে ভালো থাকতে ভালোরা উৎসাহ হারায়।
অবশ্যই অভিযোগ উত্থাপন মানেই দোষী নন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে তার যথার্ততা মিললেই না হয় তাকে দোষারোপ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তবে প্রশ্ন তোলার এখতিয়ার যে আমজনতার নেই তা নয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটির সার্বিক উন্নয়নে এবং দুর্গন্ধ দূর করার লক্ষ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে বিশেষ উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই জানা গেছে, হাসপাতালের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। আর সারা দেশের মধ্যে তৃতীয়। বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম এবং দেশের মধ্যে তৃতীয় হওয়ার মধ্যে উদ্যোগতাদের তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কিছু না থাকলেও কর্মে উৎসাহ উদ্দীপনা পাওয়াটা স্বাভাবিক। কেননা, পরিষ্কারে প্রথম হয়ে একটু উদাসীন হলেই ব্যবহারের জো থাকে না যখন, তখন তৃপ্তির ঢেকুরের সুযোগ কোথায়? তাছাড়া সরকারি হাসপাতাল এমন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যেখানে পদে পদে অপ্রতুলতা পরীলক্ষিত হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য পৌরসভা থেকে বাড়তি লোকবল দিয়ে সহায়তা করা হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রশাসনের তরফে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল দালালমুক্ত করারও বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাসপাতাল এলাকারই কিছু ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক নার্সিং হোম রয়েছে যার বাণিজ্যিক পরিচালকেরা লোকবল নিয়োগ করে হাসপাতাল থেকে রোগীকে ভুল বুঝিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানে যেতে উদ্বুব্ধ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাধ্যও করে। বিনিময়ে পায় বিশেষ হারে দালালি। ওদের উৎপাতে গ্রাম-বাংলা তথা পল্লি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর লোকজন সর্বশান্ত হয়। যার আংশিক চিত্র মাঝে মাঝে পত্রস্থ হয়। তা দৃষ্টিগোচর হওয়ায় প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া কিছু উচ্ছৃঙ্খল চিকিৎসার পরিবেশই শুধু বিঘিœত করে না, এক শ্রেণির নেশাখোর চুরি চামারিতে মেতে ওঠে। এসব রোধে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যার সুফল ইতোমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। ইতিবাচক এসব পদক্ষেপের মধ্যে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত একজন গতপরশু পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরার পথে ২৬ জন রোগীকে ছাড়পত্র নিতে ২০ টাকা করে দিতে হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। যে রোগী ও রোগীর লোকজন এ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ ক’জন অভিযোগ করে প্রতিকার প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টি জানার পর আবাসিক মেডিকেল অফিসার বলেছেন, স্বেচ্ছাসেবীর এ ধরনের টাকা নেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও প্রশ্ন, সত্যিই তা হবে তো? নাকি অবৈধভাবে আদায় করা অর্থের ভাগ অনেকের পকেট পর্যন্ত পৌঁছুয়? এটাও দেখার বিষয় বটে।
ওইস্থানের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত থাকে যদি সেই স্থান ব্যবহারকারীরা সচেতন হন। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, আমাদের দেশে সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সবগুলোতেই সেবাগ্রহণকারীদের যাচ্ছেতাই ব্যবহারে বিশ্রি পরিবেশ গড়ে ওঠে। পরিষ্কার করার কাজে নিযুক্তদের কর্মে ফাঁকি তো আছেই, তার ওপর রয়েছে অপ্রতুলতাও। ফলে বাড়তি লোকবল নিযুক্ত করতে হয়। সেবাগ্রহণকারীদের সচেতন করতে পারলে পরিবেশ যে আরো সুন্দর হতো তা বলাইবাহূল্য। একইভাবে দালালমুক্ত পরিবেশের জন্যেও প্রশাসনিক নজরদারির পাশাপাশি দরকার সচেতনতা। চুরি চামারি রোধে পোশাকধারীর পাশাপাশি শাদাপোশাকের পুলিশ বা গোয়েন্দা নজরদারিও দরকার। আর আসাধু স্বেচ্ছাসেবী? সরকারি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবীই বা থাকবে কেন? প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে ওদের শুধু রাখতেই হচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষ আদর-কদরও করতে হচ্ছে। তাতেই বাড়ছে বিপত্তি। আদরে কারো বাদরামী প্রশয় মানে অন্যায়কে মেনে নেয়া। যা রুখতে না পারলে তা সংক্রমিত হয়ে পরিস্থিতি বেশামাল হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। ফলে দ্রুত উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন।