স্বাস্থ্যই যখন সকল সুখের মূল, তখন …….

আমাদের সমাজের অনেকেই আছেন যারা খাবার নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘ভেজাল খেতে খেতে আমরা এখন এতোটাই ভেজালে অভ্যস্ত যে, ভেজালমুক্ত খেলেই বরঞ্চ অসুস্থ হয়ে পড়বো।’ ভেজাল ও বিষযুক্ত খাবারই যখন গিলতে হয় বাধ্য হয়ে তখন ওই অভিমতকে শুধুই কি ব্যঙ্গ বলা যায়? মানিয়ে নেয়ার কৌশলী আহবান বললে বোধ হয় খুব একটা ভুল বলা হয় না। তবে ভেজাল ও বিষযুক্ত খাবার তথা অস্বাস্থ্যকর খাবার যে কখনোই স্বাস্থ্যকর হয় না, হতে পারে না তা স্বাস্থ্য বিজ্ঞান নানাভাবেই প্রমাণ করে দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের পুনঃপুনঃ আহ্বান জানাচ্ছে। অথচ আমরা শুনেও না শোনার ভান করে নিজেরা হরদম নিজেদের সর্বনাশ করে করে যাচ্ছি। প্রতিকার প্রত্যাশায় সোচ্চার হওয়ার বদলে মানিয়ে নেয়ার উক্তি আওড়ে প্রজন্মকেও ঠেলে দিচ্ছি নিশ্চিত অসুস্থতার দিকে। চলমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে জাতি যে অচিরেই রোগাক্রান্ত রুগ্ন জাতির খেতাবে ভূষিত হবে তা বোদ্ধাদের অনুমান করতে কষ্ট পাওয়ার কথা নয়।
শাদাভাতের মধ্যে শাদা পাথরের টুকরো বা ঝিল মিশ্রিত খাবার কি খাওয়া যায়? যদি ওটাই খেতে বাধ্য করা হয়? একদিন দাঁতগুলোর শুধু এনামেল উঠে যাবে না, ওই দাঁতে চাবানো দূরের কথা কোনো কিছুই স্পর্শ করতে পারবে না। ভাতের সাথে ঝিল মেশানোর মতোই ভেজাল বা বিষযুক্ত খাবার নিয়ে পরিপাকতন্ত্র বিপাকে পড়ে। দিনের পর দিন রাসায়নিকযুক্ত তেল, ভেজাল মশলা ও বিষযুক্ত শাক-সবজি মাছ মাংস খেয়ে আমরা ধীরে ধীরে পরিপাকতন্ত্রকে অকেজো করে ফেলছি। হারাচ্ছি সুস্থতা। অথচ কেউই এ দিকে নজর দিচ্ছি না। যদিও দেশে ভোক্তা অধিকার আইন রয়েছে, রয়েছে প্রয়োগের লোকবলও। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গায় কীটনাশকের কতোটা ভয়াবহ ব্যবহার তার আংশিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতেই যে তথ্য পাওয়া গেছে তা শুধু অবাক হওয়ার মতোই নয়, সুস্থ চিন্তার মানুষগুলোর ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম নয়কি? যে সবজিতে কীটনাশক প্রয়োগের ৭২ ঘণ্টা পর তুলে ভালো করে ধুয়ে রান্না করলেও শূন্য দশমিক ৫ মাত্রার বিষ থাকে, সেই সবজি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তোলা হয় তা হলে তা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কৃষক ও বাজারের বাস্তব অবস্থা যা, তাতে কোনো সবজি চাষিই কীটনাশক প্রয়োগের পর তিন দিন অপেক্ষা করেন না। সকালে কীটনাশক প্রয়োগ করে দুপুরে তা তুলে বাজারে বিক্রি করছেন হরহামেশা। না আছে পরীক্ষা নিরীক্ষার তেমন ব্যবস্থা, না আছে কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করার তেমন উদ্যোগ। তবে কিছু কৃষক যে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই স্বাস্থ্যসম্মত সবজির আবাদ করছেন না তাও নয়। কিছুদিন আগেই তো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারমুক্ত আবাদের সবজি বিক্রির পৃথক বাজারই গড়ে তোলার খবর পাওয়া গিয়েছিলো। পত্রিকায় তা ফলাও করে প্রকাশও করা হয়। যদিও সেই উদ্যোগে কিছুটা হলেও ভাটা পড়ারই খবর রয়েছে। এতে বুঝতে বাকি থাকে না, শুধু উৎপাদকরাই নন, ভোক্তাদের মধ্যেও সচেতনতার ভয়ানক ঘাটতি রয়েছে।
মাছে ফরমালিন, সিম বেগুন বরবটিসহ প্রায় সকল প্রকার সবজিতেই মাত্রারিক্ত কীটনাশক। এরপরও আমরা আমাদের সুস্থতা কামনা করি কীভাবে? আত্মবিশ্বাসে অনেক কিছু অর্জন করা গেলেও বিষ কি হজম করা যায়? অসম্ভব বলেই স্বাস্থ্য বিজ্ঞান নানাভাবেই সতর্ক করছে আমাদের। অসতর্কতা আমাদের অল্প বয়সেই সুস্থতা হারাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যই যখন সকল সুখের মূল, তখন স্বাস্থ্যহীন জাতির সুখময় জীবনযাপন আশা করা অবান্তর। ফলে কালবিলম্ব না করে এখনই স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের দিকে বেশি বেশি সচেতন দৃষ্টি দেয়া দরকার। হাট-বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত শাক-সবজিসহ মাছ মাংস নিশ্চিত করার এবং ভেজাল রোধের প্রশাসনিক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরি। কীটনাশক প্রয়োগের ৭২ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বাজারে নেয়া হলে সেই সবজি শনাক্ত করার যন্ত্র হাটবাজারগুলোতে পর্যাপ্ত রাখা অতীবগুরুত্বপূর্ণ। বিষ ও রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি উৎপাদনে উৎসাহিত করতে ভোক্তাদেরও তা দামবেশি দিয়ে কেনায় আগ্রহী হওয়া উচিত।
পুনশ্চঃ মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।