ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

ইবি প্রতিনিধি: ভর্তি ফি বৃৃদ্ধির প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যহত রয়েছে। গতকাল রোববার আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একাডেমিক কাউন্সিল অথবা সিন্ডিকেট সভায় পাস না করে শুধু অর্থ কমিটির সভায় পাস হওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন।
সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি ফি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। ফি বৃদ্ধির বিষয়টি এখনো একাডেমিক কাউন্সিল অথবা সিন্ডিকেট সভায় পাস করে নি প্রশাসন। কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলে পাস না হলেও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি অতিরিক্ত ফি নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এদিকে বর্ধিত ভর্তি ফি প্রত্যাহারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যহত রেখেছে। এর আগে তারা মানববন্ধন, র‌্যালি, অবস্থান ধর্মঘট, উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছর গুলোতে ভর্তি সক্রান্ত ১৯টি খাত ছিলো। এবছর ভর্তি ফির খাত বাড়িয়ে ৩২টি করা হয়েছে। এতে প্রক্টরিয়াল সার্ভিস ফি ১০০ টাকা, ইন্টারনেট ফি ২০০ টাকা, ইন্টারনেট রক্ষণাবেক্ষণ ফি ১০০ টাকা, কাউন্সিলিং ফি ১০০ টাকা, জাতীয় দিবসসমূহ পালন ফি ১০০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপন ফি ১০০ টাকা, ওরিয়েন্টেশন ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া হল উন্নয়ন ফি, বিশ^বিদ্যালয় উন্নয়ন ফি, শিক্ষা উন্নয়ন ফি, বৈদ্যুতিক ফিসহ বিভিন্ন খাতে ১০০ টাকা করে নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। এমন ১৪টি নতুন খাত তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন নতুন খাত সৃষ্টির পাশাপাশি অন্যান্য খাতগুলোতেও টাকা বাড়ানো হয়েছে। পরিবহন ফি ৭৭০ টাকার পরিবর্তে ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন করে পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বিভাগ উন্নয়নের ফি বাড়িয়ে ৩ হাজার এবং হল ফি বাড়িয়ে ৯১৫ টাকা করা হয়েছে। শিক্ষাদান ফি ১৯২ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ টাকা, পুনভর্তি ফি ১০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা করাসহ সকল খাতে টাকার পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রশাসন। বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ধর্মতত্ত্ব, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং আইন ও শরীয়াহ অনুষদভূক্ত বিভাগসমূহে ভর্তি সম্পন্ন হতে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার ৮শ’ ২৯ টাকা ছিলো। এবছর ওই অনুষদে ভর্তি ফি সর্বমোট ১১ হাজার ৮১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহে সর্বমোট ভর্তি ফি ছিলো ৪ হাজার ৮ শ’ টাকা থেকে ৫ হাজার ২৩৭ টাকা ছিলো। এবছর ওই অনুষদে ভর্তি ফি ১৩ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে ভর্তি ফি ছিলো সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৮৪৫ টাকা। এবার ফি বৃদ্ধি করে ১২ হাজার ৪১৫ টাকা করা হয়েছে। এদিকে বর্ধিত ভর্তি ফি প্রত্যাহারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যহত রয়েছে। আন্দোলনের ৬ষ্ঠ দিন বেলা ১২টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ‘বর্ধিত ভর্তি ফি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যহত থাকবে। পরবর্তীতে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করবো।’ উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ‘ভর্তি ফি উন্নয়ন কমিটির সুপারিশে অধিকাংশ পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে ভর্তি ফি বৃদ্ধি ন্যায় সঙ্গত এবং যৌক্তিক।’